রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম প্রকাশের সময় :১২ আগস্ট, ২০২৩ ৫:৪৫ : অপরাহ্ণ
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের সদ্য ঘোষিত আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। ৪২ সদস্য বিশিষ্ট এই কমিটির অধিকাংশ নেতার ছাত্রত্ব নেই। অনেকই চাকরিজীবী ও বিবাহিত। অনেক নেতা দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতিতে সক্রিয় নেই। আবার কয়েকজনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে।
দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের পদবঞ্চিত নেতারা ‘বিতর্কিত’ এই কমিটি নিয়ে ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছেন। তারা আজ শনিবার বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। সংবাদ সম্মেলন থেকে তারা অবিলম্বে দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের কমিটি বাতিল করে পুনর্গঠনের দাবি জানিয়েছেন।
দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের কয়েকজন তৃণমূল কর্মী অভিযোগ করেছেন, ছাত্রদলের এই কমিটি নিয়ে দুই বিএনপি নেতা বাণিজ্য করেছেন। দলের আন্দোলন-সংগ্রামে ত্যাগ স্বীকার করা কর্মীদের স্থান দেওয়া হয়নি। যারা আন্দোলন-সংগ্রামে কোনো ভূমিকা রাখেনি অর্থের বিনিময়ে তাদেরকে কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়েছে।
দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের কয়েকজন তৃণমূল কর্মীরা বলছেন, এই কমিটির নেতারা দলের আন্দোলন-সংগ্রামে কোনো ভূমিকা রাখতে পারবে না।
গতকাল শুক্রবার ছাত্রদলের কেন্দ্র থেকে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার ৪২ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটিতে রবিউল হোসেন রবিকে আহ্বায়ক, মোহাম্মদ ফিরোজকে সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এবং কামরু উদ্দিন সবুজকে সদস্য সচিব করা হয়েছে।
অভিযোগ পাওয়া গেছে, বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক এনাম সিন্ডিকেট করে ছাত্রদলের এই কমিটি নিজেদের কব্জায় নিয়েছেন। তারা তাদের পছন্দের নেতাদের নিয়ে এই কমিটি গঠন করেছেন। কমিটির অধিকাংশ নেতা এনামের অনুসারী।
জানা গেছে, রবিউল হোসেন রবির বাড়ি হলো পটিয়ায়। তিনি এনামুল হক এনামের অনুসারী। সিনিয়রযুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ ফিরোজের বাড়ি সাতকানিয়ায়। তিনিও এনামের অনুসারী। সদস্য সচিব কামরু উদ্দিন সবুজের বাড়ি হলো কর্ণফুলীতে। তিনি মাহবুবের রহমান শামীমের অনুসারী। আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক নুর শাহাদ খান রিপনও তার অনুসারী। রিপনের বাড়িও কর্ণফুলীতে।
বিস্ময়কর বিষয় হলো, ৪২ সদস্য বিশিষ্ট ছাত্রদলের এই কমিটিতে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ানের কোনো অনুসারী নেই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘আমার কোনো অনুসারী নেই বিধায় কমিটিতে স্থান পায়নি। যাদের অনুসারী আছে তারা কমিটিতে স্থান পেয়েছে।’
দলীয় একটি সূত্র জানিয়েছে, লক্ষীপুরের বাসিন্দা মাহবুবের রহমান শামীম আগামী জাতীয় নির্বাচনে চট্টগ্রামের আনোয়ারা-কর্ণফুলী আসন থেকে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিয়েছেন। এ লক্ষ্যে তিনি আনোয়ারা-কর্ণফুলীতে নিজের অবস্থান তৈরি করছেন। পাশাপাশি দক্ষিণ জেলা বিএনপিতে নিজের একটি বলয় গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছেন। এর অংশ হিসেবে এনামুল হক এনামকে সঙ্গে নিয়ে ছাত্রদলকে নিজেদের কব্জায় নিয়েছেন। এই দুই নেতা ইতোমধ্যে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ানকে কোণঠাসা করে ফেলেছেন।
এ বিষয়ে জানতে মাহবুবের রহমান শামীম ও এনামুল হক এনামের মোবাইল ফোনে কল করা হলেও তারা কেউ রিসিভি করেন।
অভিযোগ পাওয়া গেছে, পটিয়ার আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য (এমপি) সামশুল হক চৌধুরীর সঙ্গে ছাত্রদলের আহ্বায়ক রবিউল হোসেন রবির ঘনিষ্ট সম্পর্ক রয়েছে। তিনি শ্রমিক লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন।
গতকাল কমিটি ঘোষণার পর রবির পটিয়ার এমপির নৌকা প্রতীকের সিলযুক্ত একটি চালের বস্তা মাথায় বহন করার ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। তবে ছবিটির সত্যতা যাচাই করা যায়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক রবিউল হোসেন রবি রাজনীতি সংবাদের কাছে দাবি করেন, ছবিটা ফেক।
তিনি বলেন, ‘আমি স্কুল জীবন থেকে ছাত্রদলের রাজনীতি করে আসছি। আমার বিরুদ্ধে অনেকে অপপ্রচার চালাচ্ছেন।’
অভিযোগ পাওয়া গেছে, কমিটির সদস্য সচিব কামরু উদ্দিন সবুজ ইসলামী ব্যাংকের চট্টগ্রাম নগরীর ও আর নিজাম রোড শাখায় চাকরি করেন।
এ ছাড়া কমিটির আরও ২৫ জন নেতার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে।
অভিযোগ পাওয়া গেছে, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক এনামের ব্যক্তিগত সহকারী মোহাম্মদ মহসিন ছাত্রদলের এই কমিটির তালিকা তৈরি করেছেন। তিনি জেলা ছাত্রদলের আগের কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
এ বিষয়ে জানতে মোহাম্মদ মহসিনের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা