শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪ | ৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২০ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা আঞ্চলিক রাজনীতি

মেয়র রেজাউলের বাসায় নগর আ.লীগের এক পক্ষের নেতাদের বৈঠক


গতকাল শনিবার সকালে চট্টগ্রাম নগরীর দামপাড়ায় একটি আলোচনা সভায় মহানগর আওয়ামী লীগ নেতারা সবাই একমঞ্চে বসেন। কিন্তু রাতে সংগঠনটির এক পক্ষের নেতারা পৃথকভাবে বৈঠক করেন।

রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম প্রকাশের সময় :২ জুলাই, ২০২৩ ১০:৩১ : পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ নেতারা গতকাল শনিবার সকালে নগরীর দামপাড়ায় একমঞ্চে বসে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক প্রয়াত জহুর আহমদ চৌধুরীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা করেছিলেন। দুপুরে সেই মঞ্চ থেকে নেমে সংগঠনটির একটি পক্ষের নেতারা রাতে একটি বৈঠকে মিলিত হয়েছেন।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর বহদ্দারহাটের বাসায় গতকাল শনিবার রাত ৮টার দিকে তারা বৈঠকে বসেন। প্রায় দুই ঘণ্টা পর্যন্ত তারা সেখানে বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে নেতারা সবাই নৈশভোজে অংশ নেন।

দলীয় একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র রাজনীতি সংবাদকে এ তথ্য জানিয়েছে।

সূত্রটি জানিয়েছে, বৈঠকে নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরী ছাড়াও শিক্ষা উপমন্ত্রী ও নগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, নগর আওয়ামী লীগের তিন সহসভাপতি-জহিরুল আলম দোভাষ, অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল ও আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু, যুগ্ম সম্পাদক বদিউল আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিক আদনান, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ফারুক এবং কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালাম উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে ২০২১ সালের ২৯ ডিসেম্বর রাতে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষের নগরীর ফিরিঙ্গী বাজারের বাসায় বৈঠক করেছিলেন নগর আওয়ামী লীগের পাঁচ নেতা। সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রীমহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খোরশেদ আলম সুজন, যুগ্ম সম্পাদক ও সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালাম এবং বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক মশিউর রহমান চৌধুরী।

দলীয় সূত্রটি জানিয়েছে, গতকাল সকালে নগরীর দামপাড়ায় প্রয়াত জহুর আহমদ চৌধুরীর কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী গ্রুপের নেতাদের তার বাসায় সন্ধ্যায় ঈদের দাওয়াত দেন।

এ বিষয়ে জানতে নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

সূত্রটি জানায়, বৈঠকে এসব নেতারা নগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন নিয়ে বিভিন্ন শলাপরামর্শ করেছেন। বৈঠকে কয়েকজন নেতা ৩১ জুলাই সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন। তারা বলেছেন, সম্মেলনের নির্ধারিত তারিখের আগের দিন চট্টগ্রাম-১০ আসনের উপনির্বাচন। পরদিন থেকে শোকের মাস আগস্ট শুরু হবে। এই প্রেক্ষাপটে ৩১ জুলাই সম্মেলন হওয়ার সুযোগ নেই। ৩১ জুলাই সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা ‘দূরভিসন্ধিমূলক’ বলে মন্তব্য করেন কয়েকজন নেতা। তারা বলেছেন, শেষ পর্যন্ত সম্মেলন স্থগিত করা হবে।

বৈঠকে অংশ নেওয়া নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক সম্পাদক বদিউল আলম রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘ঈদ উপলক্ষে মেয়র সাহেব (রেজাউল করিম) আমাদের দাওয়াত দিয়েছিলেন। তাই সেখানে গিয়েছি। বৈঠকে আমাদের মধ্যে সম্মেলন নিয়ে কিছু কথাবার্তা হয়েছে। ৩১ জুলাই সম্মেলন কীভাবে হবে? আগের দিন চট্টগ্রাম-১০ আসনের উপনির্বাচন। মহানগর কমিটির ৭ জন সদস্য ওই নির্বাচনী এলাকায় থাকেন। তারা তো নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত থাকবেন। তারা সম্মেলনে কীভাবে সম্পৃক্ত হবেন?’

গত মঙ্গলবার নগরীর থিয়েটার ইনস্টিটিউট হলে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় সম্মেলনের নতুন তারিখ ৩১ জুলাই নির্ধারণ করা হয়। নগরীর কিং অব চিটাগাং কনভেনশন হলে এই সম্মেলন আয়োজনের কথা রয়েছে।

এর আগে গত ১ অক্টোবর, ৪ ডিসেম্বর ও ১৮ ডিসেম্বর নগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু তিনবারই কেন্দ্রের নির্দেশে সম্মেলন স্থগিত করা হয়।

নগর আওয়ামী লীগে দীর্ঘদিন ধরে দুপক্ষের মধ্যে অভ্যন্তরীণ বিরোধ চলে আসছে। সংগঠনটির সাবেক সভাপতি প্রয়াত এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের বিরোধ ছিল প্রকাশ্যে। মহিউদ্দিন চৌধুরীর মৃত্যুর পরও সেই বিরোধের বরফ গলেনি। বরং বিরোধ আরও প্রকট রূপ নিয়েছে। এখন নগর আওয়ামী লীগে আ জ ম নাছির উদ্দীনের সঙ্গে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের তলে তলে আধিপত্যের লড়াই চলছে।

আরও পড়ুন: ৭ নেতার ‘মিশন’ ফেল, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মাহতাব-নাছিরও সাক্ষাৎ করলেন

গত ১৯ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের একটি পক্ষের (নওফেল) সাত নেতা গোপনে ঢাকায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিলেন। এরা হলেন-নগর আওয়ামী লীগের চার সহসভাপতি খোরশেদ আলম সুজন, জহিরুল আলম দোভাষ, অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল ও আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু, যুগ্ম সম্পাদক ও সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী ও বদিউল আলম এবং কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালাম।

এই খবর জানতে পেরে নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন তার অনুসারী ১০ নেতাকে সঙ্গে নিয়ে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পৃথকভাবে সাক্ষাৎ করতে যান। কিন্তু দুপক্ষের নেতারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলাদাভাবে সাক্ষাতের সুযোগ পাননি। প্রধানমন্ত্রী একসঙ্গে দুপক্ষের নেতাদের সাথে বৈঠক করেন।

সামনে নগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনকে ঘিরে এক পক্ষের নেতারা সংঘবদ্ধ হয়ে বৈঠক করার মাধ্যমে সংগঠনটির অভ্যন্তরীণ বিরোধ প্রকাশ্যে রূপ নিতে যাচ্ছে বলে মনে করছে সচেতন মহল।

আরও পড়ুন: চট্টগ্রাম নগর আ.লীগের সম্মেলন না হওয়া নিয়ে মুখ খুললেন স্বপন

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর