রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :৮ এপ্রিল, ২০২৩ ৯:১৪ : অপরাহ্ণ
ক্যান্সার ও হার্টের রোগীদের সুখবর দিয়েছে ওষুধ প্রস্তুতকারী কোম্পানি মডার্না।
প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. পল বার্টন বলেছেন, তারা ২০৩০ সালের মধ্যেই ক্যান্সার ও হৃদরোগের রোগের টিকা নিয়ে আসছে। এক্ষেত্রেও ব্যবহার করা হয়েছে এমআরএনএ প্রযুক্তি।
এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে তারা তৈরি করেছে করোনাভাইরাসের টিকা। তাই এমআরএনএ’কে দেখা হয় টিকার জগতে স্বর্ণালী যুগের সূচনাকারী হিসেবে।
ড. পল বার্টন বলেছেন, ২০৩০ সালের মধ্যে নিরাময়যোগ্য অবস্থায় আছেন এমন ব্যক্তিদের জন্য ব্যবহার করা যাবে ক্যান্সার ও হৃদরোগের রোগের টিকা। তাতে রক্ষা পাবে হাজার হাজার মানুষের জীবন।
তিনি বলেছেন, এরই মধ্যে গবেষণায় দারুণ সাফল্য পাওয়া গেছে। তবে এই টিকা করোনাভাইরাসের টিকার মতো সর্বসাধারণের জন্য ব্যবহারযোগ্য হবে না। কারণ, এর দাম থাকবে অনেক বেশি। ফলে উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিরা এটা ব্যবহার করতে পারবেন।
যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর হার্টের সমস্যা ও ক্যান্সারের কারণে মারা যান বিপুল সংখ্যক মানুষ। বছরে প্রায় ১৩ লাখ মানুষ মারা যান সেখানে এই দুটি রোগে। এই সংখ্যা যুক্তরাষ্ট্রে সব মৃত্যুর হিসাবে প্রতি তিনটিতে একটিরও বেশি।
ড. পল বার্টন বলেছেন, আমাদের হাতে এই টিকা চলে আসবে এবং তা হবে উচ্চ মাত্রায় কার্যকর। এতে হাজার হাজার মানুষের জীবন রক্ষা পাবে। বহুবিধ ভিন্ন রকম টিউমার ক্যান্সারে এই টিকা ব্যবহার করা যাবে।
তিনি বলেন, কয়েক মাসে আমরা আরও কিছু জিনিস শিখতে পেরেছি। তা হলো-এমআরএনএ শুধু সংক্রামক ব্যাধির জন্যই শুধু ব্যবহার করা হয় অথবা শুধু কোভিডের জন্য ব্যবহার করা হয়। কিন্তু গবেষণায় তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে যে, বিষয়টি মোটেও তা নয়।
ড. পল বার্টন বলেন, সব রকম রোগের ক্ষেত্রে এই এমআরএনএ ব্যবহার করা যেতে পারে। এর মধ্যে আছে ক্যান্সার, সংক্রামক রোগ, কার্ডিওভাসকুলার রোগ, অটোইমিউন ডিজিজ এবং বিরল রোগ।
তার ভাষায়-সব ক্ষেত্রেই আমরা গবেষণা করছি। তাতে চমৎকার ফল পাওয়া গেছে।
এই টিকা কীভাবে কাজ করবে সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি ড. পল।
তবে আগের গবেষণা দেখাচ্ছে যে, কীভাবে এমআরএনএ ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ব্যবহার করা হতে পারে। এমআরএনএ টিকা কোষের ভেতরে গিয়ে এক রকম প্রোটিন সৃষ্টি করে। তা কোভিডের মতো বিশেষ প্যাথোজেনের বিরুদ্ধে রোগ প্রতিরোধী ব্যবস্থা উন্নত করে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই নির্দেশনা ব্যবহার করে ক্যান্সার কোষেও কাজ হতে পারে। সেখানে ক্যান্সার সেলকে সতর্ক করে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারে এবং আক্রমণ থামাতে পারে।
ক্যান্সার আক্রান্ত কারও দেহে এই টিকা দেয়ার আগে চিকিৎসকরা প্রথমে তার টিউমার থেকে বায়োপস্কি করবেন। তারপর ক্যান্সার কোষে এন্টিজেন শনাক্ত করবেন এবং এমআরএএ টিকার কোড নির্ধারণ করবে ওই কোষের জন্য।
যেই কোড ওই ক্যান্সার কোষের ভেতরে একই এন্টিজেন সৃষ্টি করবে। চিকিৎসকরা এই টিকা তখন একজন রোগীর শরীরে প্রয়োগ করবেন, যাতে এন্টিজেন তৈরি হয়। এর বিরুদ্ধে সৃষ্টি করে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা।
রোগ প্রতিরোধী কোষকে তারপর প্রশিক্ষণ দেবে ক্যান্সার কোষকে ধ্বংস করে দিতে। দেহে আর কোনো ক্যান্সার কোষ আছে কিনা তাকে খুঁজে ফিরবে সে।
চিকিৎসকরা বলেছেন, ক্যান্সারের বিভিন্নতা এবং রোগীর বিভিন্নতার ওপর ভিত্তি করে এমআরএনএ টিকা প্রয়োগ করা যেতে পারে। তবে এই টিকা হবে অনেক ব্যয়বহুল।
বৃটেন এবং যুক্তরাষ্ট্রে এরই মধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ শুরু হয়েছে এমআরএনএ ক্যান্সার টিকা। সামনের কয়েক মাসে এর ফল পাওয়া যেতে পারে।
এরই মধ্যে ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ এডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) ‘বিস্ময়কর থেরাপি’ হিসেবে অনুমোদন দিয়েছে মডার্নার নিজের ক্যান্সারের টিকা।
সূত্র: ডেইলি মিরর ও দ্য গার্ডিয়ান