শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪ | ১৪ বৈশাখ, ১৪৩১ | ১৭ শাওয়াল, ১৪৪৫

মূলপাতা দেশজুড়ে

পাগলা মসজিদের দানবাক্সে টাকার পাহাড়, তিন মাসে মিললো ৪ কোটি ১৮ লাখ


রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :৭ জানুয়ারি, ২০২৩ ৮:৩৭ : অপরাহ্ণ
কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের আটটি দানবাক্স খুলে এবার রেকর্ড পরিমাণ প্রায় ৪ কোটি ১৮ লাখ টাকা পাওয়া গেছে। ছবি: সংগৃহীত
Rajnitisangbad Facebook Page

কিশোরগঞ্জ শহরের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দানবাক্স তিনমাস পর খোলা হয়েছে। মসজিদের ৮টি দানবাক্সে এবারও রেকর্ড পরিমাণ অর্থ মিলেছে।

এবার অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে দানবাক্সে মিললো ৪ কোটি ১৮ লাখ ১৬ হাজার ৭৪৪ টাকা। এছাড়াও পাওয়া গেছে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালঙ্কার।

আজ শনিবার সকাল ৯টার দিকে মসজিদের আটটি দানবাক্স খোলার পর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় গণনা শেষে এই হিসাব পাওয়া যায়।

বাক্সগুলো থেকে টাকা বের করে প্রথমে বস্তায় ভরা হয়। এবার ২০ বস্তা টাকা হয়। এরপর শুরু হয় টাকা গণনার কাজ।

ঐতিহাসিক এ মসজিদটিতে আটটি লোহার দানবাক্স রয়েছে। প্রতি তিন মাস পর পর সিন্দুকগুলো খোলা হয়।

এরপর শুরু হয় দিনব্যাপী টাকা গণনা। টাকা গণনায় মসজিদ মাদ্রাসার ছাত্র ও রূপালী ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অংশ নেন।

এবার ৩ মাস ৬ দিন পর দান ৮টি দানবাক্স খোলা হয়েছে।

এর আগে সর্বশেষ গত ১ অক্টোবর দানসিন্দুক খোলা হয়েছিল। তখন ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৭০ হাজার ৮৮২ টাকা পাওয়া গিয়েছিল। তখন দানসিন্দুক খোলার পর সাড়ে ১৫ বস্তা টাকা হয়েছিল।

পাগলা মসজিদের মালামাল সংরক্ষক মো. বিল্লাল হোসেন জানান, প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ মসজিদের দান সিন্দুকগুলোতে নগদ টাকা-পয়সা ছাড়াও স্বর্ণালঙ্কার দান করেন। দানসিন্দুকে দান করা ছাড়াও মসজিদের নিলামঘরে প্রতিদিন মানুষ নানা ধরনের জিনিসপত্র দান করেন। এসবের মধ্যে রয়েছে গরু-ছাগল, হাঁস-মুরড়ি, ফল-ফলাদি, কোরআন শরীফ ইত্যাদি। নিলামঘরে প্রতিদিন এসব নিলামে বিক্রি করে দেওয়া হয়।

কিশোরগঞ্জ শহরের ঐতিহাসিক স্থাপনার মধ্যে পাগলা মসজিদ অন্যতম একটি প্রতিষ্ঠান। শহরের পশ্চিমে হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীরে মাত্র ১০ শতাংশ ভূমির ওপর এই মসজিদটি গড়ে উঠেছে বহু বছর আগে।

জনশ্রুতি রয়েছে, এক আধ্যাত্মিক পাগল সাধকের বসবাস ছিল কিশোরগঞ্জ শহরের হারুয়া ও রাখুয়াইল এলাকার মাঝপথে প্রবাহিত নরসুন্দা নদের মধ্যবর্তী স্থানে জেগে ওঠা উঁচু টিলাকৃতির স্থানটিতে। মুসলিম-হিন্দু নির্বিশেষে সব ধর্মের লোকজনের যাতায়াত ছিল ওই সাধকের আস্তানায়। ওই পাগল সাধকের মৃত্যুর পর তার উপাসনালয়টিকে কামেল পাগল পীরের মসজিদ হিসেবে ব্যবহার শুরু করে এলাকাবাসী।

কিন্তু ওই সাধকের মৃত্যুর পর থেকে আশ্চর্যজনকভাবে সেখানে দেশের দূর-দূরান্তের লোকজনের ভিড় বাড়তে থাকে। মানত কিংবা দান খয়রাত করলে মনের বাসনা পূরণ হয়-এমন বিশ্বাস থেকে বিভিন্ন বয়সের হিন্দু-মুসলিমসহ বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণের নারী-পুরুষ মানত নিয়ে আসেন এই মসজিদে।

তারা নগদ টাকা-পয়সা, স্বর্ণ ও রুপার অলঙ্কারের পাশাপাশি গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগিও দান করেন। বিশেষ করে প্রতি শুক্রবার এ মসজিদে মানত নিয়ে আসা বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষের ঢল নামে। আগতদের মধ্যে মুসলিমদের অধিকাংশই জুমার নামাজ আদায় করেন মসজিদে। এ ইতিহাস প্রায় আড়াইশ বছরেরও অধিক সময়ের বলে জানা যায়।

কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও পাগলা মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ জানান, সব ধর্ম-বর্ণের মানুষ এ মসজিদে দান করেন। তাদের বিশ্বাস, এখানে দান করলে রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্তির পাশাপাশি মনের বাসনা পূরণ হয়। এই বিশ্বাস থেকেই দূর-দূরান্তের মানুষও এখানে দান করতে ছুটে আসেন। মজার বিষয় হচ্ছে, দান সিন্দুক খুললে চিঠিপত্রও পাওয়া যায়। সেসব চিঠিতে দানকারীরা নিজেদের মনের বাসনার কথা লিখে দেন।

মন্তব্য করুন
Rajnitisangbad Youtube


আরও খবর