রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশের সময় :৬ ডিসেম্বর, ২০২২ ১০:০৫ : অপরাহ্ণ
আওয়ামী লীগের কোনো পদে না থেকেও চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ডে প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় শোডাউন দিয়েছেন মোস্তফা-হাকিম গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান এইচ এম স্টিল অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডের পরিচালক সাইফুল আলম। তিনি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোহাম্মদ মনজুর আলমের তৃতীয় সন্তান।
পলোগ্রাউন্ডের জনসভায় সাইফুল আলমের এই শোডাউনে আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকর্মীও ছিলেন না। মোস্তফা-হাকিম গ্রুপের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে তিনি এই শোডাউন দেন।
দেখা গেছে, ৪ ডিসেম্বর নগরীর দেওয়ানহাট মোস্তফা-হাকিম গ্রুপের কার্যালয়ের সামনে থেকে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ট্রাকে করে মিছিল নিয়ে পলোগ্রাউন্ডের জনসভায় যোগ দেন।
অভিযোগ পাওয়া গেছে, মোস্তফা-হাকিম গ্রুপের প্রতিষ্ঠানগুলোতে নোটিশ দিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জনসভায় অংশ নিতে বাধ্য করা হয়।
পলোগ্রাউন্ডের জনসভায় অংশ নিতে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে অবস্থিত মোস্তফা-হাকিম গ্রুপের প্রতিষ্ঠান গোল্ডেন ইস্পাত লিমিটেডের কারখানায় অফিস আদেশও জারি করা হয়।
ওই অফিস আদেশে ৪ ডিসেম্বর পলোগ্রাউন্ডের জনসভায় অংশ নিতে গোল্ডেন ইস্পাত লিমিটেডের সকল শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের মোস্তফা হাকিম কলেজ মাঠে উপস্থিত থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
এই অফিস আদেশের কপি গতকাল সোমবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। আওয়ামী লীগের জনসভায় একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অংশগ্রহণ নিয়ে ফেসবুকে অনেকে নানা নেতিবাচক মন্তব্য করেন।
এ বিষয়ে জানতে গোল্ডেন ইস্পাত লিমিটেডের পরিচালক মোহাম্মদ সরোয়ার আলমের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে মোস্তফা-হাকিম গ্রুপের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জনসভায় অংশ নিতে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। পলোগ্রাউন্ডের জনসভায় চট্টগ্রামের অন্য কোনো ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অংশ নিতে দেখা যায়নি।
আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বিষয়টি নিশ্চিত করে রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ কোনো অসহায় দল নয় যে, কোনো ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানকে বলতে হবে জনসভায় আপনাদের লোক পাঠান। অতি উৎসাহী হয়ে কোনো ব্যবসায়ী তার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে জনসভায় অংশ নিলে আমাদের কী করার আছে?’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এইচ এম স্টিল অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডের পরিচালক সাইফুল আলম রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘আমি সামনে নগর আওয়ামী লীগের কমিটিতে আসবো। কার্যনির্বাহী সদস্য পদ পেতে চেষ্টা করতেছি। তাই পলোগ্রাউন্ডের জনসভায় শোডাউন দিয়েছি।’
কমিটিতে পদের ব্যাপারে নগর আওয়ামী লীগের কোনো নেতার সঙ্গে কি আপনার কথা হয়েছে?-এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এরকম কারো সাথে কথা হয়নি। নেতা তো আমাদের ঘরেও আছে। আরও কয়েকজনের সঙ্গে আমার যোগাযোগ আছে।’
মহানগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আপনাকে কি জনসভায় অংশ নিতে নির্দেশনা দিয়েছিল?-এই প্রশ্নের উত্তরে সাইফুল আলম বলেন, ‘না, আমাকে এরকম কেউ বলেনি। আমি নিজ থেকে জনসভায় অংশ নিয়েছি।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার দাদা (আবদুল হাকিম কন্ট্রাক্টর) দীর্ঘ ৩৬ বছর ৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। আমার বাবা মনজুর আলমও আওয়ামী লীগ থেকে তিনবার কাউন্সিলর নির্বাচন করেছেন।’
কিন্তু আপনার বাবা মনজুর আলম তো বিএনপি থেকে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন, খালেদা জিয়ার উপদেষ্টাও ছিলেন-এ কথার উত্তরে সাইফুল আলম বলেন, ‘এটা কারণে অকারণে…সব কথা তো আর বলা যায় না।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৩৫ বছর বয়সী ব্যবসায়ী সাইফুল আলম এর আগে কখনো আওয়ামী লীগের কোনো কর্মসূচিতে অংশ নেননি। তবে গত ১৮ অক্টোবর নগরীর সাগরিকায় ‘শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মঞ্চে তিনি নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন।