শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪ | ৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২০ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা চট্ট-মেট্টো

চট্টগ্রামে এসএল শিপ ইয়ার্ডে শ্রমিক ছাঁটাই, শ্রম আইন মানছেন না লোকমান


এসএল গ্রুপের মালিক মোহাম্মদ লোকমান

রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশের সময় :১৩ নভেম্বর, ২০২২ ৯:২৮ : অপরাহ্ণ

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে কুমিরা জোড়া আমতল এলাকার এসএল গ্রুপের মালিকানাধীন এসএল স্টিল শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডে বেআইনিভাবে শ্রমিক ছাঁটাইয়ের অভিযোগ উঠেছে। প্রতিষ্ঠানটির মালিক মোহাম্মদ লোকমান শ্রম আইনের তোয়াক্কা না করে শ্রমিক ছাঁটাই করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, গত অক্টোবর মাসের শেষ সপ্তাহে এসএল স্টিল শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডে পাঁচজন শ্রমিককে বিনা নোটিসে ছাঁটাই করা হয়েছে। এসব শ্রমিকরা শিপ ইয়ার্ডটিতে কাটার ফোরম্যান ও সুপারভাইজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এদের মধ্যে কেউ কেউ বিগত ১২ থেকে ১৪ বছর ধরে কাজ করে আসছিলেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এসএল স্টিল শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডের মালিক মোহাম্মদ লোকমান রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘শ্রম আইন মেনে তিন মাস আগে নোটিশ দিয়ে পাঁচ শ্রমিককে বিদায় করেছি। তাদেরকে আট মাস ধরে কোনো কাজ না করিয়ে বেতন দিয়েছি।’

শ্রমিকদের যাবতীয় বকেয়া পাওনা কেন পরিশোধ করা হচ্ছে না-এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘তাদেরকে তো আমি কোনো এপয়েনমেন্ট লেটার দিইনি। তাহলে যাবতীয় বকেয়া পাওনা পরিশোধের কথা কেন আসবে? তারা তো এখানে ক্যাজুয়াল হিসেবে কাজ করেছে।’

আপনি শ্রম আইনের আংশিক মানছেন আর অন্যগুলো মানছেন না কেন?-এ প্রশ্নের উত্তরে মোহাম্মদ লোকমান বলেন, ‘শ্রম আইন কর্পোরেট অফিসের জন্য, শিপ ইয়ার্ডের জন্য না। আইন যদি সবার জন্য সমান হয় তাহলে সরকারকে আমাদেরকে ব্যাংকে এলসি খুলে দিতে বলেন। ব্যাংকে আমরা এলসি খুলতে পারছি না। দুর্ভিক্ষ হলে কেউ আইনের দিকে তাকাবে না। আমি সামনে আরও শ্রমিক ছাঁটাই করবো।’

ছাঁটাই হওয়া শ্রমিকরা বলছেন, শ্রম আইন লঙ্ঘন করে তাদের ছাঁটাই করা হয়েছে। এরপরও এখনো ইয়ার্ড মালিকদের সংগঠন বিএসবিআরএ বা সরকারি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ দেননি। মালিকপক্ষকে সময় দিয়েছেন। বিষয়টি সুরাহা না করলে তারা আইনগত পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবেন।

ছাঁটাই হওয়া শ্রমিকরা জানান, রোববার পর্যন্ত তারা অক্টোবর মাসের বেতন পাননি। মাসের বেতনের সঙ্গে ক্ষতিপূরণ না দিলে তারা ওই মাসের বেতনও গ্রহণ করবেন না। মালিকপক্ষ গত শনিবার তাদের অক্টোবর মাসের বেতন দিতে চাইলে গ্রহণ না করে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপের প্রস্তাব দেন। গতকাল রোববার তাদের ডাকা হবে বলে জানানো হলেও ডাকেনি।

শ্রম আইনের ধারা-২০ অনুযায়ী, ছাঁটাই হলে শ্রমিককে প্রতি এক বছর চাকরির জন্য এক মাসের বেসিক বেতন পরিশোধ করতে হবে। অর্থাৎ একজন শ্রমিক যদি দশ বছর চাকরি করেন, তাহলে দশ মাসের বেসিক বেতন পাবেন। ক্ষেত্র বিশেষে ছাঁটাই হওয়া শ্রমিক ক্ষতিপূরণও পেতে পারেন। তবে ছাটাইয়ের ক্ষেত্রে সবার শেষে যোগদানকারী থেকে শুরু করতে হবে। অর্থাৎ সবচেয়ে কম চাকরি করেছে এমন শ্রমিক আগে ছাঁটাই হবে। এছাড়া এক বছরের মধ্যে নিয়োগ দিলে ছাঁটাই হওয়া শ্রমিকদের আগে নিয়োগ দিতে হবে।

এসএল স্টিল শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডে আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে শ্রমিক ছাঁটাই করা হয়েছে অভিযোগ করে জাহাজ ভাঙা শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফোরামের আহ্বায়ক তপন দত্ত বলেন, ‘আইন মেনে শ্রমিক ছাঁটাই করার কথা। কিন্তু মালিকপক্ষ আইনের কোন তোয়াক্কাই করেনি। কাজ না থাকলে কীভাবে ছাঁটাই করতে হবে সেটাও শ্রম আইনে বলা আছে। এক মাস আগে নোটিশ এবং চার মাসের বেতন দেওয়ার কথা। এক মাস আগে নোটিশ না দিলে আরও এক মাসের বেতন দিতে হয়। পুনরায় নিয়োগের ক্ষেত্রে তাদের আগে নিয়োগের শর্তও থাকে; তারা এসব মানে না। দিন মজুরের মতো বিদায় করে দেয়। শ্রমিকরা ঘাম ঝরিয়ে কঠোর পরিশ্রম করেছে, বকেয়া বেতনটা তো দেবে। সেটাও দেয়নি।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন শ্রমিক বলেন, অক্টোবরে হঠাৎ করে আমাদের চাকরিতে যেতে মানা করে দেয়। আগে কোনো নোটিশ দেয়নি। নির্ধারিত বেতনের চেয়ে আরও কম বেতন দিচ্ছিলো। আমরা নেইনি। আমাদের আরেকটা চাকরি দেখতে বলতো; সেই সময় দেয়নি। এতো বছর চাকরি করলাম এখানে। কয়েক মাসের বেতন দিয়ে যদি বলতো পরিস্থিতি উন্নতি হলে আবার নেবো, এখন রাখতে পারছি না। তাহলে মনকে অন্তত শান্তনা দিতে পারতাম; চলে আসতাম। এখন যা করেছে তাতে আমরা মনে আঘাত পেয়েছি।

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর