নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম প্রকাশের সময় :২ অক্টোবর, ২০২২ ৬:৩১ : অপরাহ্ণ
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের রাজনীতি হঠাৎ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। গেলো শুক্রবার সংগঠনটির কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় শিক্ষা উপমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলকে নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্যের পর এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
সভায় নগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য হাজী বেলাল আহমেদ ওয়ার্ড সম্মেলন নিয়ে বক্তব্য দিতে গিয়ে একপর্যায়ে শিক্ষা উপমন্ত্রী নওফেলের সাংগঠনিক যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন।
বেলাল আহমেদ নগর আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘কে নওফেল? কোথাকার নওফেল? সে ছাত্রলীগ করে নাই, যুবলীগ করে নাই। মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে হিসেবে সে চলে এসেছে-মন্ত্রী হয়েছে।’
সভায় তার এ বক্তব্য শুনে ক্ষোভে ফুঁসে উঠেন নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিক আদনান। এরপর নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, আলতাফ হোসেন বাচ্চু , কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালাম, আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মশিউর রহমান চৌধুরী ও শ্রম বিষয়ক সম্পাদক আবদুল আহাদ দাঁড়িয়ে তীব্র প্রতিবাদ করেন।
নেতাদের প্রতিবাদের মুখে বক্তব্য বন্ধ করে দেন বেলাল আহমেদ।
সভায় নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন উপস্থিত ছিলেন।
বেলাল আহমেদের এ বিস্ফোরক মন্তব্যের পর নগর আওয়ামী লীগের শিক্ষা উপমন্ত্রী নওফেলের অনুসারী নেতা-কর্মীরা ফুঁসে উঠেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকে প্রশ্ন তুলেন-‘কে এই বেলাল?’ নেতা-কর্মীদের অনেকে ক্ষুব্ধ হয়ে বেলাল আহমেদের বিরুদ্ধে ফেসবুকে রূঢ় ভাষায় মন্তব্য করেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এইচ এম ফজলে রাব্বী সুজন ফেসবুক পোস্টে বেলাল আহমেদকে হুঁশিয়ার করে বলেন, ‘তুমি চট্টগ্রাম শহরে আজ থেকে অনিরাপদ, বাসা থেকে চিন্তা করে বের হবা তুমি তোমার গডফাদার তোমাকে বাঁচাতে পারবে না ইনশাআল্লাহ ।’
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বেলাল আহমেদ নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী। তবে তিনি ২০১৫ সালে সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগ পর্যন্ত নগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী ছিলেন। ২০১৩ সালে গঠিত নগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটিতে বেলাল আহমেদকে সদস্য করিয়েছিলেন মহিউদ্দিন চৌধুরী। কিন্তু আ জ ম নাছির মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি মহিউদ্দিন চৌধুরীর বলয় থেকে বেরিয়ে আসেন। এরপর তিনি যোগ দেন আ জ ম নাছিরের সঙ্গে।
দলীয় একটি সূত্রে জানা গেছে, বেলাল আহমেদের গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীতে। তিনি এখন নগরীর রহমতগঞ্জ এলাকায় একটি ফ্ল্যাট বাসায় থাকেন। তিনি মহিউদ্দিন চৌধুরীর আগে নগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত এম এ মান্নানের অনুসারী ছিলেন। তবে তিনি আগে জাতীয় পার্টির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি সাতকানিয়া জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত ইব্রাহিম বিন খলিলের অনুসারী ছিলেন।
এসব বিষয়ে জানতে নগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য বেলাল আহমেদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কোনো কিছু বলার নেই আমার, যা বলবে আমাদের প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারি বলবেন।’
প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ফেসবুকে যার যতো ইচ্ছা লিখুক, এটা তাদের বিষয়। এতে আমার কিছু যায় আসে না।’
নগর আওয়ামী লীগের সম্পাদক মণ্ডলীর একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজনীতি সংবাদকে বলেন, যিনি নওফেলকে নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি কি যুবলীগ, ছাত্রলীগের রাজনীতি করেছেন? তিনি তো আগে জাতীয় পার্টির রাজনীতি করেছেন। নওফেল তো অন্য কোনো দলের রাজনীতি করেননি। তিনি লন্ডনে পড়াশুনার সময় দলীয় কাজে সক্রিয় ছিলেন। মহিউদ্দিন চৌধুরীর নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত ছিলেন। আর তাকে সাংগঠনিক সম্পাদক ও মন্ত্রী বানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রাম নগর যুবলীগ: সভাপতি হচ্ছেন দিদার! সম্পাদক পদে আলোচনায় দুজন