প্রতিনিধি, কুমিল্লা প্রকাশের সময় :১৫ জুন, ২০২২ ৮:০৪ : পূর্বাহ্ণ
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে টানা দুবারের মেয়র মনিরুল হক সাক্কু হ্যাটট্রিক করতে যাচ্ছেন, নাকি আসছে নতুন মুখ। তা দেখতে মুখিয়ে আছেন কুমিল্লাসহ সারা দেশের মানুষ।
কিন্তু ভোট সুষ্ঠু হবে কি না, ভোটাররা কেন্দ্রে যেতে পারবে কি না তা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে সংশয় রয়েছে।
এ ভোট নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি)র জন্য একটি অগ্নিপরীক্ষা বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এরমধ্য দিয়ে ইসির গ্রহণযোগ্যতার প্রাথমিক মাপকাঠি অনেকাংশে নির্ভর করছে। যার প্রভাব পড়বে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে।
ফলে কুমিল্লা সিটি নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করা ইসির জন্য একটি চ্যালেঞ্জও বটে।
এমন পরিস্থিতিতে আজ বুধবার সকাল ৮টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। ভোট চলবে একটানা বিকেল ৪টা পর্যন্ত।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, কুমিল্লা সিটি করপোরেশন ২৭টি ওয়ার্ডে বিভক্ত। এতে মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ২৯ হাজার ৯২০। নারী ভোটার ১ লাখ ১৭ হাজার ৯২ এবং পুরুষ ভোটার ১ লাখ ১২ হাজার ৮২৬ জন। মোট ১০৫টি ভোটকেন্দ্রের ৬৪০টি কক্ষে ভোট হবে।
রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শাহেদুন্নবী চৌধূরী বলেন, ‘আমরা সুষ্ঠু ভোট করার জন্য বদ্ধপরিকর। পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্কুলার অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসক, পুলিশের কর্মকর্তারা সবাই সজাগ থাকবেন। আমি আশাবাদী, একটি ভালো নির্বাচন হবে।’
নির্বাচনে মেয়র পদে ৫ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১০৬ জন এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৩৬ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
মেয়র পদে প্রার্থী যারা
মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত (নৌকা), সদ্য সাবেক মেয়র ও বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. মনিরুল হক সাক্কু (টেবিল ঘড়ি), স্বেচ্ছাসেবক দল থেকে বহিষ্কৃত স্বতন্ত্র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার (ঘোড়া), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী রাশেদুল ইসলাম (হাতপাখা) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল আহসান বাবুল (হরিণ)।
২০১২ ও ২০১৭ সালের সিটি নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীকে পরাজিত করে মনিরুল হক সাক্কু মেয়র নির্বাচিত হন।
জয়ের ব্যাপারে আত্মাবিশ্বাসী প্রধান দুই মেয়র প্রার্থী
ধারনা করা হচ্ছে, মেয়র পদে মূল প্রতিদ্বন্ধী রিফাতের সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাক্কুর লড়াই হবে সমানে সমান। তবে ভোটযুদ্ধ ত্রিমুখী বা চতুর্মুখী হতে পারে বলেও জল্পনা-কল্পনা আছে। যদিও নৌকার রিফাত ও স্বতন্ত্র সাক্কু-দুজনের একজনকেই বাছাই করে নেবেন কুমিল্লার মানুষ।
নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত ও বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত সাবেক মেয়র স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু এতোদিন ভোটের মাঠে একে অপরকে ঘায়েল করার জন্য নানামুখী বাকযুদ্ধে লিপ্ত ছিলেন। নির্বাচনের শেষ মুহুর্তে এসে তারা দুজনই ভোটযুদ্ধে জয়ী হবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
ভোটের আগের দিন মঙ্গলবার নৌকার প্রার্থী ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরফানুল হক রিফাত বলেছেন, কুমিল্লা শহরের মানুষ পরিবর্তন চায়। তারা দুর্নীতিমুক্ত একটি নতুন মুখ চায়। এ জন্য কুমিল্লা শহরের মানুষ তাকে ভোট দেবে।
সাবেক মেয়র ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু জানান, এবারের নির্বাচনে তিনি দ্বিগুণ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হতে যাচ্ছেন।
তিনি বলেন, ভোটাররা সবাই ভোটের জন্য উদগ্রীব হয়ে আছেন। ইভিএম বা অন্য কোনো সমস্যা নয়, ভোট দিতে পারবে কিনা এমন আশঙ্কাই করছেন সবাই।
মেয়র হিসেবে যেই নির্বাচিত হোক না কেন নগরীর জলাবদ্ধতা, সন্ত্রাস, মাদক, যানজট অপরিকল্পিত আবাসন সমস্যার সমাধান করে কুমিল্লাকে একটি আধুনিক নগরী হিসেবে গড়ে তুলবেন এটাই সাধারণ ভোটারদের প্রত্যাশা।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
প্রায় ৬০ লাখ জনসংখ্যা অধ্যুষিত দেশের রাজধানী ঢাকা ও বন্দর নগরী চট্টগ্রামের মাঝামাঝি পয়েন্টে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পাদদেশে গোমতী নদীর কোলঘেষে অবস্থিত শিক্ষা-সংস্কৃতির পাদপীঠ খ্যাত দেশের প্রাচীন জেলা কুমিল্লা। প্রায় দেড়শ বছর পূর্বে এ জেলায় গড়ে তোলা হয়েছিল কুমিল্লা পৌরসভা।
কালের বিবর্তনে কুমিল্লা পৌরসভাকে ২০১১ সালে সিটি করপোরেশনে উন্নীত করা হয়। বর্তমানে এ সিটি করপোরেশনের আয়তন ৫৩.৪ বর্গকিলোমিটার। ইতোপূর্বে ২০১২ সালে ও ২০১৭ সালে এ সিটিতে দুটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই দুটি নির্বাচনে জয় পান বিএনপি দলীয় প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু। তিনি এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন।