শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪ | ৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২০ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা ধর্ম

২ বছর পর এলো উৎসবের ঈদ



নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশের সময় :১ মে, ২০২২ ১:৩১ : অপরাহ্ণ

করোনার ধাক্কা পেরিয়ে দুই বছর পর স্বাভাবিক সময়ের মতো সারাদেশে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপনের প্রস্তুতি চলছে। করোনা সংক্রমণের কারণে বিগত ৪টি ঈদ লকডাউনের মধ্যে কাটিয়েছেন দেশবাসী। ঈদগাহে হয়নি কোনো জামাত। মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করলেও মুসল্লিরা চিরাচরিত কোলাকুলি করতে পারেননি। সে কারণে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগিতে হৃদয়ের ছোঁয়া ছিল অনুপস্থিত।

কিন্তু এ বছর সে পরিস্থিতি নেই। দুই বছরের করোনা ভীতি কাটিয়ে এ বছর স্বাভাবিক ও সুন্দর পরিবেশে ফিরে এসেছে পবিত্র ঈদুল ফিতর।

আগামীকাল সোমবার না পরদিন মঙ্গলবার ঈদুল ফিতর উদযাপন হবে, তা জানা যাবে আজ রোববার সন্ধ্যায়। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির বৈঠক থেকে এ সিদ্ধান্ত জানানো হবে।

আজ বিকেল থেকেই এক ফালি বাঁকা চাঁদ খুঁজতে লাখো মানুষের দৃষ্টি থাকবে পশ্চিম আকাশের কোণে। সন্ধ্যায় দেশজুড়ে মুখে মুখে থাকবে জিজ্ঞাসা- চাঁদ কি উঠেছে ?

চাঁদের দেখা মিললেই আনন্দের বন্যা বয়ে যাবে ঘরে ঘরে। টিভি-বেতারে বাজতে থাকবে কবি কাজী নজরুল ইসলামের সেই চিরচেনা গান -‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’। পাড়া-মহল্লার মসজিদ থেকে ভেসে আসবে ‘ঈদ মোবারক’ ধ্বনি।

আজ রোববার চাঁদ দেখা গেলে রোজা হবে ২৯টি এবং ঈদ হবে সোমবার। আজ চাঁদ দেখা না গেলে ৩০ রোজা শেষে মঙ্গলবার হবে মুসলিম বিশ্বের অন্যতম বড় উৎসব ঈদুল ফিতর। তবে গত বছর ৩০ রোজা শেষে ঈদ হয়েছিল।

ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া এবং সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, কাতারসহ মধ্যপ্রাচ্যের অধিকাংশ দেশে সোমবার পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে।

সাধারণত মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর একদিন পর বাংলাদেশের আকাশে শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা যায়। সে হিসেবে বাংলাদেশে আজ সন্ধ্যায় চাঁদ দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা কম।

ঈদুল ফিতর হলো আরবি শব্দ। ঈদ অর্থ আনন্দ, উৎসব, খুশি। আর ফিতর অর্থ ভাঙা কিংবা ভাঙন। ঈদুল ফিতর অর্থ হলো রোজা ভাঙার পর্ব বা উৎসব। ঈদের শাব্দিক অর্থ হলো ‘বারবার ফিরে আসা’। এ দিনটি বারবার ফিরে আসে বলে এর নামকরণ হয়েছে ঈদ।

ইসলামী পরিভাষায় ঈদের আগের রাতটিকে ‘চাঁদ রাত’ বলা হয়ে থাকে। তবে এর প্রকৃত অর্থ হচ্ছে লায়লাতুল জায়েজা বা পুরস্কারের রাত।

গত এক মাস ছিল সংযমের। মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের আশায় রোজা পালন করেছেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। ঘরে ঘরে, মসজিদে-মক্তবে করা হয়েছে কোরআন খতম। ইবাদত-বন্দেগীর পাশাপাশি ছিল ঈদ উপলক্ষে সবার জন্য নতুন পোশাক কেনার চেষ্টা।

সবশেষে প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগ করতে বহু কষ্টে বাড়ি ফেরার আয়োজন। সড়কে ভোগান্তি, যানজট, টিকিটের হাহাকার-নানা ঝক্কি ঝামেলা পেরিয়ে ইতোমধ্যে শিকড়ের টানে বাড়ি ফিরে গেছেন শহুরে মানুষেরা। প্রিয়জনের সাথে ঈদ উদযাপন এ দেশের আবহমান ঐতিহ্যের অংশ।

মুসলমানদের সবচেয়ে বড় এই উৎসবের সময় রাজধানীবাসীর একটা বড় অংশই গ্রামের বাড়িতে যান। ঢাকায় যারা ঈদ কাটান তাদের অনেকেই বিনোদন কেন্দ্রসহ রেস্তোরাঁয় যান পরিবার-পরিজন কিংবা বন্ধুদের সঙ্গে। উদযাপনে বাড়তি মাত্রা দিতে ফাঁকা ঢাকায় ঘুরে বেড়ান অনেকে।

করোনা ভাইরাসের কারণে এর আগের ৪টি ঈদ লকডাউনের মধ্যে কাটিয়েছেন নগরবাসী। বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ছিল তালা, হোটেল রেস্তোরাঁগুলোতেও ছিল বিধিনিষেধের কড়াকড়ি। এবার কোনো বিধিনিষেধ না থাকায় ইচ্ছেমতো ঘুরেফিরে ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে পারবেন সবাই।

ঈদের দিনটি ধনী-গরিব আশরাফ-আতরাফনির্বিশেষে সবাইকে এক কাতারে দাঁড় করায়। এ দিক থেকে ঈদ কেবল আনন্দের বার্তাই নিয়ে আসে না, ইসলামের সাম্যের এক বড় পরিচয় উদ্ভাসিত হয় এই আনন্দঘন উৎসবের মধ্য দিয়ে।

ধর্ম পরিচয় পেছনে ফেলে মুসলমানদের এ উৎসবের আবেশ অন্য ধর্মাবলম্বীদের মধ্যেও ছড়াবে। আনন্দময় হয়ে উঠবে সারা দেশ। সব ভেদাভেদ, হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে ঈদগাহর জামাতে এক কাতারে শামিল হবেন সবাই। নামাজ শেষে একে অপরকে ‘ঈদ মোবারক’ বলে বুকে জড়িয়ে ধরবেন।

ইসলাম ধর্মের দুই ঈদের মধ্যে এক মাসের দীর্ঘ সিয়াম সাধনার কারণে ঈদুল ফিতরের জন্য প্রস্তুতি আয়োজন থাকে একটু বেশি। শুধু পোশাকে ঈদের আনন্দ সীমাবদ্ধ নয়, ঘরে ঘরে সাধ্যমতো নানা উপাদেয় খাবারের আয়োজন করেন সবাই। আজ কিংবা কাল চাঁদ দেখা যাওয়ার পর মুদি-সওদাপাতিতেই বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়বে মানুষ। ‘সেমাইয়ের ঈদ’ নামে প্রচলিত এই ঈদে সেমাইয়ের সঙ্গে থাকবে ফিরনি, পিঠা, পায়েস, হালিম, পোলাও, কোর্মাসহ মুখরোচক রকমারি খাবারের আয়োজন।

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর