নিজস্ব ক্রীড়া প্রতিবেদক প্রকাশের সময় :২৩ মার্চ, ২০২২ ১০:০৯ : অপরাহ্ণ
অগ্নিঝরা বোলিংয়ে কাজটা সহজ করে দিয়েছেন তাসকিন আহমেদ। দক্ষিণ আফ্রিকাকে থামিয়ে দিয়েছেন মাত্র ১৫৪ রানে। ব্যাট হাতে বাকি কাজ সারলেন তামিম ইকবাল।
লিটন-সাকিবকে নিয়ে চমৎকার ইনিংস উপহার দিয়েছেন অধিনায়ক। ব্যাটে-বলের দাপুটে দিনে বাংলাদেশের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকা। বড় জয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় সিরিজ জিতে ইতিহাস গড়লো লাল-সবুজের দল।
তিন ম্যাচ সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৯ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। এই জয়ে তিন ম্যাচের সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতেছে তামিম ইকবালের দল।
এই সফরেই প্রোটিয়াদের মাটিতে প্রথম জয়ের স্বাদ পায় বাংলাদেশ। এবার দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে সিরিজ জয়ের কীর্তি গড়েছে বাংলাদেশ।
আজ বুধবার সেঞ্চুরিয়নের সুপার স্পোর্টস পার্কে দিবারাত্রির ম্যাচটিতে আগে ব্যাট করে ৩৭ ওভারে ১৫৪ রানে গুটিয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। জবাবে ২৬.৩ ওভার হাতে রেখেই জয়ের নাগাল পেয়ে যায় বাংলাদেশ।
রান তাড়ায় দারুণ শুরু করেন দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও লিটন দাস। দুজনেই খেলেন দায়িত্বশীল ইনিংস। এই জুটিতেই মূলত জয়ের ভিত পেয়ে যায় বাংলাদেশ।
ব্যাট হাতে তামিম করেন ৮২ বলে ৮৭ রান। তার ইনিংসটি সাজানো ছিল ১৪টি বাউন্ডারি দিয়ে। এ ছাড়া লিটন দাস ৮টি চারের সাহায্যে ৫৭ বলে করেন ৪৮ রান। তার সাথে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন সাকিব, যিনি ২০ বলে ১৮ রান করেন।
লিটনের বিদায়ের পর আর কোনো বিপদ ঘটেনি সফরকারীদের। তামিম শতক থেকে অল্প দূরে থাকতেই জয় নিশ্চিত করে বাংলাদেশ।
মূলত ম্যাচ জয়ের সমীকরণ সহজ করে দেন তাসকিন। বল হাতে মাত্র ৩৫ রান দিয়ে তিনি নিয়েছেন ৫ উইকেট। এটা তার ওয়ানডে ক্যারিয়ারে দ্বিতীয় সেরা বোলিং।
এর আগেরটিও অবশ্য ৫ উইকেটের। তবে সেটা হলো ২৮ রানে ৫ উইকেট। ৫ উইকেট নিয়ে আজ ম্যাচ সেরাও হয়েছেন ডানহাতি এই পেসার।
এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে মারকুটে ভঙ্গিতে খেলে ইনিংসের সূচনা করেছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার দুই ওপেনার ইয়ানেমান মালান ও কুইন্টন ডি কক।
তবে বেশিক্ষণ এই জুটি টিকতে দেননি বাংলাদেশি স্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজ। তার বলে ব্যক্তিগত ১২ রানে আউট হন কুইন্টন ডি কক।
এরপর প্রোটিয়া শিবিরে জোড়া আঘাত হানেন তাসকিন আহমেদ। প্রথমে ফেরান তিনে নামা কাইল ভেরেইনাকে। পরের ওভারে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে থাকা ইয়েনামান মালানকে (৩৯) ফেরান এই পেসার।
৭১ রানে সাকিব আল হাসান প্রতিপক্ষ দলপতি বাভুমাকে সাজঘরে ফেরালে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ চলে আসে বাংলাদেশের হাতে। সাকিবের বলে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়ার আগে ২ রান করেন বাভুমা।
এরপর দারুণ এক ডেলিভারিতে রাসি ফন ডার ডাসেনকে সাজঘরের পথ দেখান শরিফুল।
৮৩ রানে পাঁচ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। সেখান থেকে দলকে উদ্ধার করতে জুটি বাধেন ডেভিড মিলার ও ডোয়াইন প্রিটোরিয়াস।
এই জুটিও টিকতে দেননি তাসকিন। প্রিটোরিয়াস নিজের তৃতীয় শিকার বানিয়ে ২৪ রানে জুটি ভাঙেন ডানহাতি পেসার। ২০ রানে আউট হন প্রিটোরিয়াস।
তবুও উইকেটে টিকে ছিলেন মিলার। তাকেও ফিরিয়ে দেন তাসকিন। এরপর রাবাদার উইকেট তুলে নিয়ে পাঁচ উইকেটে স্বাদ পান ডানহাতি পেসার।
এর আগে ভারতের বিপক্ষে নিজের অভিষেক ম্যাচে পাঁচ উইকেট পেয়েছিলেন তাসকিন।
দ্রুত উইকেট হারানোর দিনে বেশিদূর যেতে পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকা। শেষ দিকের ব্যাটারদের ওপর ভর করে শেষ পর্যন্ত ১৫৪ রানের পুঁজি পায় প্রোটিয়ারা।
বল হাতে বাংলাদেশের হয়ে তাসকিন ছাড়াও ২২ রান খরচায় সাকিব নেন দুটি উইকেট। মিরাজ ও শরিফুলের শিকারও সমান একটি করে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
দক্ষিণ আফ্রিকা: ৩৭ ওভারে ১৫৪ (ডি কক ১২, মালান ৩৯, কাইল ৯, বাভুমা ২, রাসি ফন ডার ডাসেন ৪, মিলার ১৬, প্রিটোরিয়াস ২০, কেশব ২৮, রাবাদা ৪, শামছি ৩, লুঙ্গি ০; তাসকিন ৯-০-৩৫-৫, মিরাজ ৫-০-২৭-১, মুস্তাফিজ ৭-০-২৩-০, সাকিব ৯-০-২৪-২, শরিফুল ৭-০-৩৭-১)।
বাংলাদেশ: ২৬.৩ ওভারে ১৫৬/১ (তামিম ৮৭*, লিটন ৪৮, সাকিব ১৮*; রাবাদা ৫.৩-০-৩৭-০, লুঙ্গি ৫-০-২৪-৫, শামছি ৭-০-৪১-০, কেশব ৭-০-৩৬-১, প্রিটোরিয়াস ২-০-১৮-০)।
ফল: বাংলাদেশ ৯ উইকেটে জয়ী।