বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪ | ১১ বৈশাখ, ১৪৩১ | ১৪ শাওয়াল, ১৪৪৫

মূলপাতা রাজনীতির মুখ

ছাত্রলীগ ও শিবির ক্যাডারদের গোলাগুলি থেকে দুবার রক্ষা পেয়েছিলেন শাহেদ


নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশের সময় :১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ৬:১৭ : অপরাহ্ণ
Rajnitisangbad Facebook Page

মুহাম্মদ শাহেদ, যুবদল চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক। বয়স ৪৯ বছর।

চট্টগ্রামের রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচিত মুখ এ যুবনেতা ৩৩ বছর ধরে রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত।

তৃণমূল থেকে উঠে আসা এই যুবনেতা রাজনীতির মাঠে ছাত্রলীগ ও শিবির ক্যাডারদের গোলাগুলির হাত থেকে দুবার অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছিলেন।

গত বুধবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) মুহাম্মদ শাহেদ রাজনীতি সংবাদের সঙ্গে তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার নিয়ে আলাপকালে সেই ভয়ংকর অমানিশার মুহূর্তের কথা তুলে ধরেন।

মুহাম্মদ শাহেদ জানান, তিনি ১৯৮৯ সালে ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে সাংগঠনিকভাবে সম্পৃক্ত হন। গ্রামের বাড়ি চন্দনাইশে সাতবাড়িয়া ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক থেকে রাজনীতির পথচলা শুরু তার।

১৯৯১ সালে তিনি গ্রাম থেকে চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে এসে ভর্তি হন। পলিটেকনিক ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের রাজনীতি শুরু করেন। তখন মহানগর ছাত্রদলের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য হিসেবে অন্তর্ভূক্ত হন। এরপর ১৯৯৯ সালে পাঁচলাইশ থানা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক হন।

২০০৩ সালে তিনি নগর ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক পদে ঠাঁই পান। ২০১১ সালে তিনি ছাত্রদল থেকে নগর যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক পদে স্থান পান। ৭ বছর পর তিনি নগর যুবদলের নেতৃত্বে আসেন।

২০১৮ সালের ১ জুন যুবদলের কেন্দ্র থেকে ঘোষিত চট্টগ্রাম মহানগরের কমিটিতে একাধিক প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে টপকে সাধারণ সম্পাদক পদে স্থান করে নেন তিনি।

শাহেদ মহানগরের পাশাপাশি জায়গা করে নিয়েছেন যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটিতেও। ২০২০ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ঘোষিত যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সাধারণ সম্পাদক পদে (চট্টগ্রাম বিভাগ) দায়িত্ব দেওয়া হয় তাকে।

৩৩ বছরের দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়েছেন বলে জানান শাহেদ।

তিনি জানান, আন্দোলন-সংগ্রাম করতে গিয়ে ১৯৯৪ সাল থেকে একাধিক ‘রাজনৈতিক মামলার’ আসামি হয়েছেন, পায়ে সাড়ে সাত কেজি ওজনের ডান্ডাবেড়ি পরে কেটেছেন জেলও।

শুধু তাই নয়, রাজনীতির মাঠে প্রতিপক্ষ ছাত্রলীগ ও ছাত্রশিবির ক্যাডারদের গোলাগুলির মুখে পড়ে দুবার অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন তিনি।

শাহেদ বলেন, ‘১৯৯৪ সালের ২০ নভেম্বর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে শিবির ক্যাডারদের গুলিতে ছাত্রসংসদের ভিপি মোহাম্মদ জমির ও কলেজ ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ নিহত হওয়ার সময় তখন আমি ক্যাম্পাসে ছিলাম। সেদিন সকালে জমির ও ফরিদ ক্যান্টিন থেকে নাস্তা করে আসার পর আমার সাথে দেখা হয়। আমি ক্যান্টিনে নাস্তা করতে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর দেখি, ছাত্রশিবিরের ক্যাডাররা মাইক্রোতে করে হঠাৎ করে ক্যাম্পাসে এসে এলোপাতাড়ি গুলি ছুঁড়তে থাকে। আমি তখন দৌঁড়ে ক্যান্টিন থেকে বেরিয়ে গেলাম। একটা বুলেট আমার গা ঘেঁষে ক্যাম্পাসের দেওয়ালে লাগে। একপর্যায়ে ছাত্রদলের কর্মীরাও শিবির ক্যাডারদের লক্ষ্য করে পাল্টা গুলি ছুঁড়তে থাকে। এরপর আমি ক্যাম্পাসের মূল গেইটে গিয়ে দেখি, গুলিবিদ্ধ হয়ে আমার বন্ধু নওশাদের পেট থেকে নাড়িভুড়ি বেরিয়ে পড়ে। তখন ব্যনার দিয়ে তাকে মুড়িয়ে পার্শ্ববর্তী হলিক্রিসেন্ট হাসপাতালে পাঠিয়ে দিই। এরপর ভেতরে গিয়ে দেখি, প্রিন্সিপ্যালের কক্ষের সামনে জমির ও ফরিদের লাশ পড়ে আছে। সেদিন জমির, ফরিদ ও নওশাদের মতো আমারও পরিণতি হতো; অল্পের জন্য মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছিলাম।’

এরপর আরও একবার গোলাগুলির মুখে পড়ে অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছিলেন শাহেদ।

তিনি বলেন, ‘১৯৯৬ সালের ৯ মার্চ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগ ও জামায়াত ইসলামীর অসহযোগ আন্দোলনের সময় নগরীর বিআরটিসি মোড়ে বিএনপির দেশ বাঁচাও কর্মসূচিতে ছাত্রলীগের ক্যাডাররা হামলা চালায়। সেদিন ছাত্রলীগের ক্যাডাররা চারদিকে অবস্থান নিয়ে বিএনপি নেতা-কর্মীদের লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়তে থাকে। এ সময় আমি চৈতন্য গলিতে ছিলাম। তখন একটা রাবার বুলেট একেবারে আমার ডান পা ঘেঁষে ছুটে যায়। অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছিলাম। সেদিন বাকলিয়া থেকে বিএনপির একটা মিছিল চৈতন্য গলির দিকে আসার সময় দুজন গুলিবিদ্ধ হয়েছিল।’

আন্দোলন-সংগ্রামে ত্যাগ স্বীকার আর নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে নগর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক পদে স্থান পেয়েছেন বলে জানান শাহেদ।

নগর যুবদলের বর্তমান কমিটিকে সংগঠনের একাংশের নেতা-কর্মীরা পকেট কমিটি হিসেবে আখ্যায়িত করার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘মোশারফ হোসেন দীপ্তি (নগর যুবদলের সভাপতি) আর আমি কি এ পর্যন্ত হেঁটে হেঁটে আসছি? আমরা কেন্দ্রে গেলাম আর তারা পকেট থেকে কাগজ বের করে স্বাক্ষর করে কমিটি দিয়েছে? নাকি আমরা ছাত্রলীগ থেকে এসেছি? আমরা প্রোডাক্টটা কী রকম?’

মুহাম্মদ শাহেদ
দলীয় কার্যালয় নাসিমন ভবন প্রাঙ্গণে নগর বিএনপির এক সমাবেশে বক্তব্য দেন মুহাম্মদ শাহেদ

নগর যুবদলের আগের কমিটি আর বর্তমান কমিটির সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের তফাৎ কতটুকু?

এ প্রশ্নের জবাবে শাহেদ বলেন, ‘বিগত সময়ে নগর যুবদলের যতগুলো কমিটি হয়েছে সেগুলোর সাথে বর্তমান কমিটির সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের অনেক তফাৎ। দলের বিভিন্ন কর্মসূচিতে নগর যুবদলের বর্তমান কমিটির নেতা-কর্মীদের সরব উপস্থিতি প্রমাণ হয়, সাংগঠনিকভাবে আমরা এখন কতটা শক্তিশালী।’

নগর যুবদলের বর্তমান সভাপতি আগের কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তাহলে কি তিনিও (মোশারফ হোসেন দীপ্তি) ব্যর্থ ছিলেন?

এর উত্তরে শাহেদ বলেন, ‘অবশ্যই ব্যর্থতার দায়ভার নিতে হবে। বেলাল ভাই (কাজী বেলাল উদ্দিন) সভাপতি আর তিনি (মোশারফ হোসেন দীপ্তি) সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।’

তার মানে সাধারণ সম্পাদক পদে আপনি নিজেকে সফল দাবি করছেন?

এ প্রশ্নের জবাবে শাহেদ বলেন, ‘আমি সফল নাকি ব্যর্থ তা মূল্যায়ন করবেন দলের নেতা-কর্মীরা।’

রাজনৈতিক ক্যারিয়ার নিয়ে ভবিষ্যতে নিজেকে কোথায় দেখতে চান?

এর উত্তরে শাহেদ জানালেন, ‘আগামীতে নগর যুবদলের সভাপতি হওয়ার প্রত্যাশা রয়েছে তার।’

রাজনীতির মুখ থেকে আরও পড়ুন

সাক্ষাৎকার থেকে আরও পড়ুন

মন্তব্য করুন
Rajnitisangbad Youtube


আরও খবর