প্রতিনিধি, নারায়ণগঞ্জ প্রকাশের সময় :১৫ জানুয়ারি, ২০২২ ১০:৩৫ : পূর্বাহ্ণ
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনের সকল প্রচার-প্রচারণা শেষ হয়েছে শুক্রবার মধ্যরাতে।
আগামীকাল রোববার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বহু প্রতীক্ষিত এই নির্বাচন।
আলোচিত এই নির্বাচনকে ঘিরে শুধু নারায়ণগঞ্জবাসী নয়, সারা দেশের মানুষের চোখ।
তবে এবারের নির্বাচনকে ঘিরে নারায়ণগঞ্জবাসীর মধ্যে উৎসবের আমেজের পাশাপাশি উৎকণ্ঠাও বিরাজ করছে।
বিশ্লেষণ চলছে, নির্বাচনে মেয়র পদে জয়-পরাজয়ে নিয়ামক কী হবে?
প্রার্থীর যোগ্যতা-অযোগ্যতা, দলীয় প্রতীক, নারী না কি নতুন ভোটার-কারা নির্ধারণ করবেন নতুন মেয়র। নগরজুড়ে আজ এমনই আলোচনা সবার মধ্যে।
মেয়র পদে সাতজন প্রার্থী থাকলেও সবার দৃষ্টি আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী ও বিএনপির সদ্য বহিষ্কৃত নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকারের দিকে।
এ লড়াইয়ে পারদ হিসেবে যুক্ত হয়েছিল স্থানীয় সংসদ সদস্য শামীম ওসমান ও আইভীর মধ্যকার ‘শীতল বিরোধ’।
আরও পড়ুন: নৌকায় ভোট চাইলেও আইভীর নাম মুখে নিলেন না শামীম ওসমান
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের হস্তক্ষেপে সেই বিরোধে প্রকাশ্যে নমনীয়তা দেখা গেলেও অন্তর্দ্বন্দ্ব কতটুকু কমেছে, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন অনেকে।
বিরোধের বীজ থেকে গেলে নৌকার পালে খানিকটা ধাক্কা লাগারও শঙ্কা রয়েছে।
এ ভোটকে কেন্দ্র করে সাধারণ মানুষের মধ্যে শঙ্কাও কম নয়।
কারণ সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনের মৃত্যুর তালিকা এই আশঙ্কাকে আরও জোরালো করেছে।
এর পাশাপাশি নগরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে একই দলের একাধিক প্রার্থী পরিবেশ নিয়ে আশঙ্কা বাড়াচ্ছে।
এতোদিন পাল্টাপাল্টি বাগযুদ্ধ চললেও শেষ দিনে দুই মেয়রপ্রার্থী আইভী ও তৈমূরও ভোটের দিন সহিংসতার আশঙ্কা করছেন।
আরও পড়ুন: আমি লক্ষাধিক ভোটে জিতবো: আইভী
সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেছেন, ‘ভোটকেন্দ্রে সহিংসতা না হলে আমার বিজয় সুনিশ্চিত। নির্বাচনে আমি লাখো ভোটে জিতবো।’
নগরের দেওভোগে নিজ বাসভবনে গতকাল শুক্রবার সকালে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ কথা বলেন।
নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পুলিশ সুপারের (এসপি) সঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানকের বৈঠক নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্বতন্ত্র মেয়রপ্রার্থী তৈমূর আলম।
গতকাল শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনকালে এমন বৈঠক নির্বাচনী আচরণবিধির লঙ্ঘন।’
আরও পড়ুন: সরকারি দলের মেহমানরা নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন: তৈমূর
সংবাদ সম্মেলনে তৈমূর আলম খন্দকার অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। টেলিফোনে হুমকি দিচ্ছে, গ্রেপ্তার করছে। নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের জন্য বহিরাগতদের এনে সার্কিট হাউসসহ বিভিন্ন জায়গায় রাখা হচ্ছে। একাধিকবার অভিযোগ করেও প্রতিকার পাইনি। তারপরও আমি নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থা রাখতে চাই।’
তবে নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে এসব দুশ্চিন্তা উড়িয়ে দিয়ে শান্তিপূর্ণ ভোটের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
নাসিক নির্বাচনকে ঘিরে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মাহফুজা আক্তার বলেন, ‘নাসিক নির্বাচনে ১৯২টি ভোটকেন্দ্রে ও কেন্দ্রের বাইরে নিরাপত্তা নিশ্চিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাঁচহাজারের বেশি সদস্য নিয়োজিত থাকবে। প্রতি কেন্দ্রে থাকবেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ২৬ জন সদস্য। এ ভোটে কোনো ধরনের অনিয়ম সহ্য করা হবে না। ভোটাররা যেন শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিতে পারেন, সেজন্য যা যা করার নির্বাচন কমিশন ব্যবস্থা নিয়েছে।’
উল্লেখ্য, আগামীকাল অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে মেয়র পদে ৭ জন, ২৭ ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৪৮ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৩২ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ৫ লাখ ১৭ হাজার ৩৫৭। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৫৯ হাজার ৮৩৪ ও মহিলা ভোটার ২ লাখ ৫৭ হাজার ৫১৯ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ৪ জন।