বঙ্গোপসাগরে প্রায় ১৭ থেকে ১০৩ ট্রিলিয়ন ঘনফুট মিথেন গ্যাসের (গ্যাস হাইড্রেন্ট) সন্ধান পেয়েছে বাংলাদেশ। নেদারল্যান্ডস ও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে এক যৌথ জরিপে এ গ্যাসের সন্ধান পেয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিট।
আজ বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন জানান, মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত অনুসন্ধানে মিথেন গ্যাসের সন্ধান মিলেছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের প্রধান খুরশীদ আলম বলেন, আমরা পুরো এলাকায় এখনও সার্ভে করতে পারিনি। তবে যতটুকুতে করতে পেরেছি তাতে আমরা ধারণা করছি ১৭ থেকে ১০৩ টিসিএফ গ্যাস হাইড্রেন্ট এখানে রয়েছে।
এ ছাড়া বঙ্গোপসাগরে বিপুল পরিমাণ সামুদ্রিক শৈবালের সন্ধান পাওয়া গেছে, যেটি মাছ ও পশুখাদ্যের কাঁচামাল এবং সাবান ও শ্যাম্পুর মতো প্রসাধনী পণ্য উৎপাদনে ব্যবহার করা যেতে পারে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের একান্ত অর্থনৈতিক অঞ্চলে ২২০ প্রজাতির সি-উইড (Seaweed), ৩৪৭ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ, ৪৯৮ প্রজাতির ঝিনুক, ৫২ প্রজাতির চিংড়ি, ৫ প্রজাতির লবস্টার, ৬ প্রজাতির কাঁকড়া ও ৬১ প্রজাতির সি-গ্রাস চিহ্নিত করা হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের প্রতিনিধিসহ যুক্তরাজ্য ও নেদারল্যান্ডস ভিত্তিক গবেষকরা গত দুই বছরে বাংলাদেশের সমুদ্র এলাকায় গবেষণা কার্যক্রমের ভিত্তিতে এ ফলাফল পেয়েছেন।
গভীর সমুদ্রে অনুসন্ধান কাজ চালানোর জন্য একমাত্র ডেডিকেটেড মার্কিন ফেডারেল সংস্থা এনওএএ ওশেন এক্সপ্লোরেশন-এর তথ্যানুসারে, গ্যাস হাইড্রেট তথা মিথেন গ্যাস মূলত উচ্চচাপ ও নিম্ন তাপমাত্রায় গঠিত জমাট বরফ আকৃতির এক ধরনের কঠিন পদার্থ।
এটি স্তূপীকৃত বালির ছিদ্রের ভেতরে ছড়ানো স্ফটিক আকারে অথবা কাদার তলানিতে ক্ষুদ্র পিণ্ড, শিট বা রেখা আকারে বিদ্যমান থাকে।
মহীসোপানের প্রান্তসীমায় ৩০০ মিটারের বেশি গভীরতায় সমুদ্রের তলদেশের নিচে গ্যাস হাইড্রেট পানি ও মাটির চাপে মিথেন বা স্ফটিক রূপে বিরাজ করে, যা সাধারণত ৫০০ মিটার গভীরতায় স্থিতিশীল অবস্থায় থাকে।
স্থিতিশীল গ্যাস হাইড্রেটসমৃদ্ধ এ অঞ্চল সমুদ্রের তলদেশ থেকে প্রায় ১০ থেকে ১০০ মিটার পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে। প্রাকৃতিকভাবে কিছু সামুদ্রিক পলিতে এবং ভূগর্ভস্থ চিরহিমায়িত অঞ্চলে গ্যাস হাইড্রেট গঠিত হয়।
হাইড্রেটের মজুদ বিভিন্ন কারণে গুরুত্বপূর্ণ। কয়লা, তেল ও প্রচলিত প্রাকৃতিক গ্যাসের সম্মিলিত মজুদে যে পরিমাণ কয়লা থাকে, গ্যাস হাইড্রেট মজুদে তার প্রায় দ্বিগুণ পরিমাণ কার্বন থাকতে পারে।