শুক্রবার, ১৭ মে, ২০২৪ | ৩ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ | ৮ জিলকদ, ১৪৪৫

মূলপাতা খেলা

ক্যাচ মিসে ম্যাচ মিস বাংলাদেশের


নিজস্ব ক্রীড়া প্রতিবেদক প্রকাশের সময় :২৪ অক্টোবর, ২০২১ ৭:৪০ : অপরাহ্ণ
Rajnitisangbad Facebook Page

হাতে যেন মাখন মেখে নেমেছিলেন লিটন দাস! না হলে এভাবে কেউ ক্যাচ ফসকে দেয়? এক বার নয়, দুবার একই ভুল। ক্যাচ ফসকালো তো ফস্কে গেলো ম্যাচটাও। সেই সঙ্গে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ভুল ক্যাপ্টেন্সি তো ছিলই। সব মিলিয়ে হার দিয়েই আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভ অভিযান শুরু হলো বাংলাদেশের।

আজ রোববার রাতে শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথমে ব্যাট করে ৪ উইকেট হারিয়ে ১৭১ রান করে বাংলাদেশ। জবাবে ১৮.৫ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে জয় তুলে নেয় লঙ্কানরা।

লঙ্কানদের হয়ে ৪৯ বল খেলে সর্বোচ্চ ৮০ রান করে অপরাজিত ছিলেন চারিথ আসালাঙ্কা। তার ক্যাচই মিস করে বসেন লিটন। শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থেকে দলের জয় নিশ্চিত করায় তার হাতে তুলে দেয়া হয় ম্যাচ সেরার পুরষ্কার।

১৭২ রানের চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতেই হোঁচট খেয়ে বসে লঙ্কানরা। উইকেটের সুবিধা কাজে লাগাতে নাসুম আহমেদকে দলে আনেন মাহমুদউল্লাহ। অধিনায়কের আস্থা রেখেছেন নাসুম। কুশল পেরেরাকে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে প্রথম সাফল্য এনে দেন তিনি।

প্রথম ওভারেই নাসুমের বলে সুইপ করার চেষ্টায় ছিলেন পেরেরা। কিন্তু লাইন মিস করেন। বল চলে যায় স্টাম্পে।

শুরুর ধাক্কা দ্রুতই কাটিয়ে ওঠে শ্রীলঙ্কা। দ্বিতীয় উইকেটে প্রতিরোধ গড়ে তোলে তারা। আগ্রাসী ব্যাটিং করেন আসালাঙ্কা। ভয়ংকর এই জুটি ভাঙেন সাকিব আল হাসান। নবম ওভারে সাকিবের বলে পাথুম নিসানকা চেষ্টা করেন সুইপ করতে। কিন্তু ব্যাটে-বলে করতে পারেননি। বল লাগে স্টাম্পে। ভাঙে ৬৯ রানের জুটি। ২১ বলে ২৪ করে ফেরেন নিসানকা।

একই ওভারে আরেকটি উইকেট তুলে নেন সাকিব। দ্বিতীয় শিকার বানান আভিশকা ফার্নান্দোকে। সাকিবের ফুল লেংথের বলে আভিশকা ফ্লিক করার চেষ্টা করেন। কিন্তু বল সোজা হয়ে চলে যায় স্টাম্পে। এক ওভারে দুটি উইকেট নিয়ে বাংলাদেশকে খেলায় ফেরান তিনি।

সাকিবের জোড়া আঘাতের পর উইকেট তুলে নেন সাইফউদ্দিন। দারুণ এক স্লোয়ারে তিনি ফিরিয়ে দিলেন বিপজ্জনক ভানিন্দু হাসারাঙ্গাকে। দ্রুত তিন উইকেট হারানোর পরে অনেকটা ম্যাচের লাগাম বাংলাদেশের হাতে চলে আসে।

কিন্তু উইকেটে জমে যান আসালাঙ্কা। বেশ নির্ভার হয়ে হয়ে ব্যাট করেন তিনি। মাঝে ক্যাচ মিস করে বাংলাদেশকে বিপদে ফেলে দেন লিটন দাস। প্রথমে ভানুকা রাজাপাকসাকে জীবন দেন তিনি। আফিফ হোসেনের অফ স্টাম্পের বাইরের বল উড়িয়ে সুইপ করেন রাজাপাকসা। কিন্তু স্কয়ার লেগে ক্যাচটি নিতে পারেননি লিটন দাস। কিন্তু পারলেন না। ক্যাচ মিস করে উল্টো বাউন্ডারি দিলেন তিনি।

এরপর আরেকটি ক্যাচ মিস করেন ওই লিটন। সেটিও খুব সহজ ক্যাচ ছিল। কিন্তু এবারও ব্যর্থ হলেন লিটন। সেটি ছিল আসালাঙ্কার উইকেট। মুস্তাফিজের অফ স্টাম্পের বাইরের লেংথ বল উড়িয়ে মারেন আসালাঙ্কা। লিটন ডিপ কাভার থেকে ছুটে বলের নিচে চলে আসেন। কিন্তু পারলেন না ক্যাচ ধরতে। এমন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ ঘুরে যাওয়ার জন্য ওই দুটি ক্যাচ মিসই যথেষ্ট। জীবন পেয়ে শ্রীলঙ্কাকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন আসালাঙ্কা ও রাজাপাকসা। ৪৯ বলে ৮০ রানের দারুণ খেলেন আসালাঙ্কা।

এর আগে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে নাঈম ও মুশফিকের হাফসেঞ্চুরির সুবাদে লড়াকু পুঁজি পায় লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।

ইনিংস শুরু করতে নেমে দেখেশুনে খেলতে থাকেন লিটন দাস ও নাঈম শেখ। ব্যাট হাতে ভালোই এগোচ্ছিলেন দুজন। যখন মনে হচ্ছিল পাওয়ার-প্লের ৬ ওভারে কোনো উইকেট হারাচ্ছে না টাইগাররা, তখনই বাধে বিপত্তি। কুমারার করা ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারের পাঁচ নম্বর বলটি মিড অফ দিয়ে উড়িয়ে মারতে গিয়ে শানাকার হাতে ধরা পড়েন লিটন।

১৬ বলে ১৬ রান করে যখন লিটন মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে আসছিলেন, তখনই তার কাছে গিয়ে কিছু একটা বলে বসলেন কুমারা। জবাব এলো লিটনের পক্ষ থেকেও। এরপর লেগে গেলো ধাক্কাধাক্কি। নাঈম শেখ পেছন থেকে এসে কুমারাকে ধাক্কা দিয়ে সরালেন লিটনের কাছ থেকে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে দেখে শেষমেশ আম্পায়ারই ছুটে এসে থামালেন তিনজনকে। দুই দলের মাঠের লড়াইয়ে এমন চিত্র যেন ইদানীং নিয়মিত দৃশ্য হয়ে উঠেছে।

ওয়ানডাউনে নেমে থিতু হতে পারেননি সাকিব আল হাসান। অষ্টম ওভারে তাকে বোল্ড করেন চামিকা করুনারত্নে। লঙ্কান বোলারের লেংথ বরাবর ডেলিভারিতে পুল শট খেলতে চেষ্টা করেছিলেন সাকিব। কিন্তু পারলেন না। বল গিয়ে আঘাত করে স্টাম্পে। দুই বাউন্ডারিতে সাত বলে ১০ রান করেন বিদায় নেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার।

ক্যাচ মিসে ম্যাচ মিস বাংলাদেশের

তবে দুই সতীর্থ ফিরলেও ততক্ষণে উইকেটে থিতু হয়ে যান নাঈম। তৃতীয় উইকেটে মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে জুটি বাধেন নাঈম। এই উইকেটে রানের গতি বাড়িয়েছে বাংলাদেশ।

এর মধ্যে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ৪৪ বলে ব্যাক্তিগত হাফসেঞ্চুরি স্পর্শ করেন নাঈম। বিশ্বকাপে নিজের তৃতীয় ম্যাচ খেলেই দ্বিতীয় হাফসেঞ্চুরির দেখা পেয়ে গেলেন তরুণ এই ওপেনার। ভয়ংকর হয়ে ওঠা নাঈমের প্রতিরোধ ভাঙেন ফার্নান্দো। ১৬.১তম ওভারে সহজ ক্যাচ তুলে দেন নাঈম। নিজের বলে নিজেই ক্যাচ নিয়ে নাঈমকে সাজঘরের পথ দেখান ফার্নান্দো। ছয় বাউন্ডারিতে ৫২ বলে ৬২ রান করে ফেরেন নাঈম।

নাঈম ফিরলেও উইকেটে দারুণ ছন্দে ছিলেন মুশফিক। ৩২ বলে তুলে নেন ব্যাক্তিগত হাফসেঞ্চুরি। টি-টোয়েন্টিতে এটি তাঁর ষষ্ঠ হাফসেঞ্চুরি আর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রথম। দীর্ঘদিনে রানে না থাকা মুশফিক ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে বেরিয়ে বাংলাদেশকে ভালো সংগ্রহ এনে দেন তিনি। ইনিংস শেষে ৫৭ রানে অপরাজিত ছিলেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটার।

মন্তব্য করুন
Rajnitisangbad Youtube


আরও খবর