শুক্রবার, ১৭ মে, ২০২৪ | ৩ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ | ৮ জিলকদ, ১৪৪৫

মূলপাতা দেশজুড়ে

কুমিল্লায় পূজামণ্ডপে ধর্ম অবমাননা

কে এই ইকবাল, যা বলছে পরিবার


প্রতিনিধি, কুমিল্লা প্রকাশের সময় :২১ অক্টোবর, ২০২১ ৯:১৫ : পূর্বাহ্ণ
Rajnitisangbad Facebook Page

কুমিল্লার নানুয়াদিঘীর পাড়ে পূজামণ্ডপে হনুমানের পায়ের উপর পবিত্র কোরআন মাজীদ রাখার ঘটনায় সিসিটিভির ফুটেজে চিহ্নিত যুবক ইকবাল হোসেন (৩৫) মাদকসেবী ও মানসিক ভারসাম্যহীন বলে জানিয়েছে তার পরিবার। খাবারের লোভ দেখিয়ে তাকে যে যাই বলে সে তাই-ই করে।

গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় কুমিল্লার পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ও পুলিশের একাধিক সংস্থার তদন্তে ইকবাল হোসেনকে শনাক্ত করা হয়েছে।

মণ্ডপে সহিংসতার আগের রাতে ইকবাল হোসেন পবিত্র কোরআন মাজীদ হাতে নিয়ে মণ্ডপের দিকে রওনা হন। এরপর মূল মণ্ডপের বাইরে পূজার থিম হিসেবে রাখা হনুমানের মূর্তির ওপর কোরআন রেখে ফিরে আসেন তিনি। এসব দৃশ্য ধরা পড়েছে ওই এলাকার সিসিটিভি ক্যামেরায়।

ইকবাল হোসেনের বাবার নাম নূর আহমেদ আলম। বাড়ি কুমিল্লা নগরের সুজানগর এলাকায়।

জানা যায়, কুমিল্লা নগরীর সুজানগর এলাকার রবীন্দ্রচন্দ্র সূত্রধরের বাড়িতে ৩য় তলায় চার মাস যাবত ভাড়া থাকেন নূর আহমেদ আলমের পরিবার। বুধবার সন্ধ্যায় সেই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় বাসায় তালা দেয়া।

পরে ইকবালের ছোটভাই রায়হানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিকদের কাছে বলেন, সিসিটিভির ফুটেজের এই মানুষ আমার ভাই। সে পাগল।

রায়হান জানান, ঘটনার এক সপ্তাহ আগে খেলার মাঠে তাকে নিয়ে ছেলেরা দুষ্টামি করায় সে সবাইকে জুতা দিয়ে মেরেছিল। সে আমার মাকে পাথর নিয়ে মারতে চায়। সে বুঝে শুনে এমন কাজ করার কথা না। ওকে চা-পানি, নাস্তা করালে যা বলবে তাই করবে।

রায়হান বলেন, আমার ভাই যদি অন্যায় করে থাকেন, যদি তা সত্য হয়, তাহলে তার শাস্তি হোক। তবে ইকবাল কারও প্ররোচনায় এমন কাজ করতে পারেন।

ইকবাল হোসেনের মা বিবি আমেনা বলেন, ইকবাল মানসিকভাবে অসুস্থ। কিছুদিন আগেই বখাটেপনার কারণে গণপিটুনির শিকার হন ইকবাল। এরপর থেকে তার আচরণে সবাই অতিষ্ঠ। সে বিভিন্ন সময় রাস্তাঘাটে মানুষকে হয়রানি করতো। গোসলখানায় দরজা বন্ধ করে ইয়াবা সেবন করতো। ইকবাল মাজারে মাজারে থাকতো। বিভিন্ন সময় আখাউড়া মাজারে যেতো। কুমিল্লার বিভিন্ন মাজারেও তার যাতায়াত ছিল। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে।

ইকবালের নানি রহিমা বেগম জানান, ১৩ দিন আগে ঘর থেকে ইকবালকে বের করে দিয়েছি। ব্লেড দিয়ে পাঁচটি হাঁস জবাই করেছে। ইকবালের অত্যাচারে আমরা অতিষ্ঠ।

এ বিষয়ে ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সৈয়দ সোহেল গণমাধ্যমকে বলেন, আমি ১০ বছর ধরে ইকবালকে চিনি। সে রঙের কাজ করত। মাঝে মাঝে নির্মাণকাজের সহযোগী হিসেবেও কাজ করত। ইকবাল ইয়াবা সেবন করায় প্রায়ই তাকে নিয়ে অনেক দেনদরবার করতে হতো।

বাড়ির মালিক রবীন্দ্রচন্দ্র সূত্রধর জানান, ইকবালকে তিনি চেনেন না, সে কখনও এই বাসায় আসতো না। তার বাবা ভূট্টো নামে পরিচিত। তিনি ফল ব্যবসা করেন। চার মাস ভাড়া থাকলেও ভাড়া দিয়েছেন দুই মাসের। স্থানীয় কাউন্সিলরকে বিষয়টি জানিয়েছি। ঘটনার পর থেকে ইকবালের বাবা পুলিশকে সহায়তা করছেন, তাই তিনি তাদের সাথে আছেন বলে জানান ইকবালের মা বিবি আমেনা ও ভাই রায়হান।

শারদীয় দুর্গাপূজার মহাঅষ্টমীর দিন গত বুধবার ভোরে কুমিল্লা শহরের নানুয়াদিঘির উত্তরপাড়ে দর্পণ সংঘের উদ্যোগে আয়োজিত অস্থায়ী পূজা মণ্ডপে পবিত্র কোরআন দেখা যায়।

গত ১৩ অক্টাবর সকালে কুমিল্লা নগরীর নানুয়া দীঘির উত্তরপাড় পূজামণ্ডপে কুরআন অবমাননার অভিযোগে রঘুরামপুর গ্রামের মো. ফয়জ (৪১) ফেসবুক লাইভে এসে ঘটনাটি প্রচার করেন।

এরপর কোরআন অবমাননার অভিযোগ তুলে ওই মণ্ডপে হামলা চালায় একদল লোক। সেখানে ব্যাপক ভাংচুর চালানো হয়।

এ ঘটনার জের ধরে ওই দিন চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে হিন্দুদের ওপর হামলা করতে যাওয়া একদল ব্যক্তির সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। সেখানে নিহত হন চারজন। পরদিন নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে হিন্দুদের মন্দির, মণ্ডপ ও দোকানপাটে হামলা–ভাংচুর চালানো হয়। সেখানে হামলায় নিহত হয়েছিলেন দুইজন। এরপর রংপুরের পীরগঞ্জে হিন্দু বসতিতে হামলা করে ভাংচুর, লুটপাট ও ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। হিন্দুদের মন্দির–মণ্ডপসহ বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা হয়েছে দেশের আরও অনেক এলাকায়।

কুমিল্লায় পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন মাজিদ রাখার দৃশ্যটি লাইভ প্রচার ও মোবাইল ফোনে ধারণ করে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযাগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগে সেদিন রাতেই পুলিশ ফয়জকে আটক করে। এরপর তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়।

কুমিল্লার ঘটনায় এ পর্যন্ত জেলার তিনটি থানায় মোট আটটি মামলা হয়েছে। এই আট মামলায় অজ্ঞাত অন্তত ৮০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

মন্তব্য করুন
Rajnitisangbad Youtube


আরও খবর