নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশের সময় :২০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১:৩০ : অপরাহ্ণ
দুই বছর আগে দুই বার থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিট সম্মেলনের উদ্যোগ নিয়েছিল চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ। কিন্তু সংগঠনটির একপক্ষের আপত্তির কারণে তখন সে উদ্যোগ ভেস্তে যায়। আগামী ১২ অক্টোবর থেকে আবারও তৃণমূলে সম্মেলনের উদ্যোগ নিয়েছে নগর আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ।
দলীয় সূত্রের খবর, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কেন্দ্রের ‘চাপে’ নগর আওয়ামী লীগের দুপক্ষ বিভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে তৃণমূলে সম্মেলন আয়োজনের বিষয়ে একমত হয়েছে।
গতকাল রোববার নগরীর থিয়েটার ইনস্টিটিউটে আয়োজিত বর্ধিত সভায় তৃণমূলে সম্মেলন শুরুর ঘোষণা দেয় নগর আওয়ামী লীগ।
দলীয় সূত্র জানিয়েছে, গত ২০ ও ২১ জুন চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সাথে দুই দিন ব্যাপী অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ ওই সভায় এ সিদ্ধান্ত দেন।
দলীয় সূত্র থেকে জানা গেছে, নগর আওয়ামী লীগের মেয়াদোত্তীর্ণ ১৫ থানার মধ্যে ৭টিই হলো আহ্বায়ক কমিটি। বাকি ৮ থানার পূর্ণাঙ্গ কমিটিগুলোর অধিকাংশরই মেয়াদ পেরিয়ে গেছে ৯ বছর আগে।
৪৩টি সাংগঠনিক ওয়ার্ডের মধ্যে দুই বছর আগে সাতটি ওয়ার্ডের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। বাকি ৩৬টি ওয়ার্ড কমিটির মধ্যে বেশিরভাগই ১২ বছর আগে মেয়াদ পেরিয়ে গেছে।
নগর আওয়ামী লীগের ৪৩টি সাংগঠনিক ওয়ার্ডে তিনটি করে মোট ১২৯টি ইউনিট কমিটি রয়েছে। কিন্তু এসব কমিটির অধিকাংশরই অস্তিত্ব নেই।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ২ সেপ্টেম্বর নগর আওয়ামী লীগের ৪৩টি সাংগঠনিক ওয়ার্ড ও ১২৯টি ইউনিট সম্মেলনের দিনক্ষণ ঘোষণা করেছিলেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন।
কিন্তু নগর আওয়ামী লীগের একটি পক্ষের নেতারা কেন্দ্রে গিয়ে সম্মেলনের ব্যাপারে আপত্তি জানান। এরপর কেন্দ্র থেকে সম্মেলন স্থগিত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়।
পরবর্তীতে ২০ সেপ্টেম্বর নগর আওয়ামী লীগের এক বর্ধিত সভায় কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ আবার থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিটের সম্মেলন আয়োজনের নির্দেশনা দেন। নভেম্বর মাসের মধ্যে সম্মেলন শেষ করার তাগাদাও দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।
কিন্তু তখন বাধা হয়ে দাঁড়ায় করোনা। ফলে আর সম্মেলনের উদ্যোগ নিতে পারেনি নগর আওয়ামী লীগ।
দুই বছর পর তৃতীয় বারের মতো তৃণমূলে সম্মেলনের উদ্যোগ নিয়েছে সংগঠনটি।
বারে বারে বাধার মুখে পড়া নগর আওয়ামী লীগের তৃণমূলের সম্মেলন কি এবার সফলতার মুখ দেখবে?
নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিক আদনান রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘এর আগে সাংগঠনিক প্রক্রিয়াগত কারণে আমাদের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝি হয়েছিল। যে কারণে দুই বছর আগে আমরা সম্মেলনের আয়োজন করতে পারিনি। তবে এবার কেন্দ্রের নির্দেশে আমরা সম্মেলনের উদ্যোগ নিয়েছি। আশা করছি, এবার সফলতার মুখ দেখবে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে নগর আওয়ামী লীগের একজন সহ-সভাপতি রাজনীতি সংবাদকে বলেন, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে তৃণমূলকে সুসংগঠিত করতে সম্মেলনের নির্দেশ দিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। এ লক্ষে কেন্দ্র চাপ দিয়েছে সবাইকে বিভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হতে। তবে সম্মেলনের সময় এই ঐক্য থাকে কিনা সেটাই দেখার বিষয়।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, তৃণমূলের সম্মেলনের আগে আবার নতুন সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন অভিযানে নামবে নগর আওয়ামী লীগ। কয়েক দিনের মধ্যে এ কর্মসূচি শুরু হবে। দুই বছর আগেও এই কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়।
আ জ ম নাছিরের হুঁশিয়ারি
গতকাল রোববার বর্ধিত সভায় নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, সম্মেলন নিয়ে সবার সহযোগে যেটুকু সিদ্ধান্ত হবে তা অবশ্যই মেনে নিতে হবে। তবে এ নিয়ে বিশৃঙ্খলা বা বিভেদ কখনো গ্রহণযোগ্য হবে না। যারা দলে থেকে শৃঙ্খলাবিরোধী কাজ করবেন তাদের কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না।
যারা দায়িত্বে থেকে সংগঠনের কাজ নিয়ে অবহেলা করেন এবং বিভিন্ন রকম অজুহাত সৃষ্টি করেন তাদেরকে পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর অনুরোধ করেন তিনি।
অন্য জেলার চেয়ে নগর আওয়ামী লীগ শক্তিশালী: নওফেল
সভায় নগর আওয়ামী লীগের কার্যনিবার্হী কমিটির সদস্য ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, অন্যান্য সাংগঠনিক জেলার চেয়ে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ অনেক শক্তিশালী।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তৃণমূলকে শক্তিশালী করার লক্ষে নেতা-কর্মীদের দলীয় শৃঙ্খলা বজায় রাখার আহ্বান জানান তিনি।