শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪ | ৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২০ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা ক্যাম্পাস রাজনীতি

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে রাজনীতি নিষিদ্ধের নেপথ্যে ‘ষড়যন্ত্র’



নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশের সময় :১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ৯:৩০ : পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) ক্যাম্পাসে রাজনীতি নিষিদ্ধ করা নিয়ে ক্ষোভে ফুঁসছেন ছাত্রলীগের বিবাদমান দুপক্ষের নেতা-কর্মীরা। দুপক্ষের নেতারাই কলেজ কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের পেছনে একে অপরের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ করছেন তারা।

গত ১৪ আগস্ট চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক সাহেনা আক্তার স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।

কলেজ ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদেরকে কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি বা সভা-সমাবেশ ও মিছিল করতে নিষেধ করা হয়েছে।

কলেজের একাডেমিক কাউন্সিল সভায় শিক্ষার সুষ্ঠ ও সুশৃঙ্খল পরিবেশ বজায় রাখার লক্ষ্যে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

১৫ আগস্টের আগে কলেজ কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে তখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেন চমেক ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী। তারা এটিকে ‘অভাবনীয় সিদ্ধান্ত’ উল্লেখ করে তা প্রত্যাহারের দাবি তুলেন।

করোনা পরিস্থিতির কারণে দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকার পর সোমবার খুলেছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ। খুলে দেওয়া হয়েছে শিক্ষার্থীদের হোস্টেলও। শিক্ষার্থীদের পদচারণায় আবারও মুখরিত হয়ে উঠে প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকার কারণে ক্যাম্পাস যেন প্রাণহীন পাথরের মূর্তির ন্যায়।

দলীয় সূত্রের খবর, রাজনীতি নিষিদ্ধের মধ্যেও ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে ক্যাম্পাসে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে পুস্পস্তবক অর্পণ করে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। কিন্তু ছাত্রলীগের অপর পক্ষ নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারীরা ওই দিন কর্মসূচি পালন করেনি।

গত এক মাস ধরে ক্যাম্পাসে রাজনীতি বন্ধ রয়েছে। কলেজ খোলার পর ছাত্রলীগের দুপক্ষের নেতা-কর্মীরা ক্যাম্পাসে রাজনীতি চালু করার ব্যাপারে তৎপর হয়ে উঠেছেন।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. সাহেনা আক্তার রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘ছাত্রলীগের একের পর এক সংঘাতের কারণে শিক্ষার সুষ্ঠ পরিবেশ বজায় রাখার লক্ষ্যে ক্যাম্পাসে রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এখন ছাত্রলীগ সুবিধা আদায়ের জন্য ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলছে। এটা ভিত্তিহীন অভিযোগ।’

প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যতদিন পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হয় ততদিন ক্যাম্পাসে রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকবে।’

চমেক ছাত্রলীগ নেতারা প্রশ্ন তুলছেন, চট্টগ্রাম কলেজ ও মহসিন কলেজেও সংঘাতের ঘটনা ঘটে। কিন্তু কলেজ দুটির কর্তৃপক্ষ তো ক্যাম্পাসে রাজনীতি নিষিদ্ধ করেনি। তাহলে চমেকে রাজনীতি কেন নিষিদ্ধ করা হবে?

চমেক ছাত্রলীগের (আ জ ম নাছিরের অনুসারী) সভাপতি হাবীবুর রহমান রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘এরকম সুন্দর একটা ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি থাকবে না সেটা অনাকাঙ্খিত। এখন কলেজে খুলেছে। আমরা কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে আবার রাজনীতি চালু করার দাবি জানাবো।’

প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অনেকে চায় না আমরা ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে রাজনীতি করি। ক্যাম্পাসে রাজনীতি বন্ধের পেছনে তাদের ষড়যন্ত্র থাকতে পারে।’

ছাত্রলীগের অপর পক্ষের (শিক্ষা উপমন্ত্রী নওফেলের অনুসারী) নেতা কে এম তানভীর বলেন, ‘ক্যাম্পাসে রাজনীতি নিষিদ্ধ করা কর্তৃপক্ষের স্বেচ্ছাচারী আচরণ। কেননা ক্যাম্পাসে রাজনীতি বন্ধ করার মতো কোনো পরিবেশ তৈরি হয়নি। ক্যাম্পাসে হোস্টেলের পরিবেশ এখন খুবই শান্ত। ১৫ আগস্টকে সামনে রেখে রাজনীতি নিষিদ্ধের পেছনে কর্তৃপক্ষের কোনো ষড়যন্ত্র রয়েছে।’

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসে গত প্রায় ৩৫ বছর ধরে ছাত্রলীগের একক নিয়ন্ত্রণ ছিল চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের হাতে। অন্য কোনো নেতার আধিপত্য ও অনুসারী ছিল না। কিন্তু সেই ক্যাম্পাস এখন সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছিরের একক নিয়ন্ত্রণে নেই। গত ১০ মাস ধরে চমেক ক্যাম্পাসে অস্তিত্বের জানান দিচ্ছে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের কর্মীবাহিনী। এতে ক্যাম্পাসে নাছির অনুসারীদের একক আধিপত্য খর্ব হয়ে গেছে।

ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গত এক বছর ধরে নাছির ও নওফেলের অনুসারী ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে আসছে।

সর্বশেষ গত ২৭ এপ্রিল বিকেলে চমেক ক্যাম্পাসে প্রথমে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। পরে ক্যাম্পাসে বহিরাগত ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা গিয়ে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ওপর হামলা চালায়। এতে তিন ইন্টার্ন চিকিৎসক আহত হয়।

এর আগে গত ২ মার্চ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের হোস্টেলে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এসময় অন্তত ১২টি কক্ষ ভাঙচুর করেন ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা।

আরও পড়ুন:

চমেক: অস্তিত্বের জানান দিচ্ছে নওফেলের কর্মীবাহিনী, নাছির অনুসারীদের আধিপত্য খর্ব

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর