শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪ | ৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২০ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা আঞ্চলিক রাজনীতি

ফটিকছড়িতে আওয়ামী লীগের পুরনো দ্বন্দ্ব নতুন করে চাঙ্গা, নেপথ্যে তৃতীয় পক্ষের ইন্ধন!


নাজিম উদ্দিন মুহুরী ও এইচ এম আবু তৈয়ব

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশের সময় :৩১ আগস্ট, ২০২১ ১:৩০ : অপরাহ্ণ

চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলায় আওয়ামী লীগের দুপক্ষের পুরনো দ্বন্দ্ব আবারও চাঙ্গা হয়ে উঠেছে।

আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিন মুহুরী ও উপজেলা চেয়ারম্যান এইচ এম আবু তৈয়বের পক্ষের নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিরোধ আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এ নিয়ে দুপক্ষের নেতা-কর্মীরা মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছেন।

যে কোনো মুহূর্তে এলাকায় দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধতে পারে বলে দলীয় সূত্রে আভাস পাওয়া গেছে।

চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতারা মনে করছেন, দলের বাইরের তৃতীয় পক্ষের ইন্ধনে আওয়ামী লীগের দুপক্ষের মধ্যে বিরোধের আগুন আবার জ্বলে উঠেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২৭ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৬তম শাহাদাত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ফটিকছড়ি সরকারি কলেজ অডিটোরিয়ামে আলোচনা সভার আয়োজন করতে চেয়েছিলেন উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগ। উপজেলা চেয়ারম্যান এইচ এম আবু তৈয়বের নির্দেশে তারা এ কর্মসূচির আহ্বান করেন।

একই সময়ে সেখানে পাল্টা কর্মসূচির আহ্বান করে উপজেলা ছাত্রলীগ। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিন মুহুরীর নির্দেশে ছাত্রলীগ এই কর্মসূচির আয়োজন করে।

কিন্তু একই স্থানে দুপক্ষের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির কারণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কায় স্থানীয় প্রশাসন সেখানে ১৪৪ ধারা জারি করে। এতে পণ্ড হয়ে যায় দুপক্ষের কর্মসূচি।

এ ঘটনার পর থেকে উপজেলা আওয়ামী লীগে উত্তেজনা বিরাজ করছে।

জানা গেছে, নাজিম উদ্দিন মুহুরী হলেন উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এটিএম পেয়ারুল ইসলামের অনুসারী। তাদের বলয়ে নারী সংসদ সদস্য খাদিজাতুল আনোয়ার সনিসহ কয়েকজন সিনিয়র নেতা রয়েছেন।

দলীয় কোনো পদে না থাকা এইচ এম আবু তৈয়ব স্থানীয় সংসদ সদস্য ও তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীর সাথে সখ্যতা রেখে চলেন। আবু তৈয়বের বলয়ে রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক তৌহিদুল আলম বাবুসহ কয়েকজন সিনিয়র নেতা।

দলীয় সূত্রের খবর, ২০১৪ সাল থেকে ফটিকছড়ি-২ আসনে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীর সাথে এটিএম পেয়ারুল ইসলামের বিরোধ চলে আসছে। আর এই বিরোধের প্রভাব পড়েছে উপজেলা আওয়ামী লীগে।

নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী ১৯৯১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের টিকিটে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন। দলবদল করে তিনি ২০০১ সালে বিএনপি থেকে মনোনয়ন নিয়ে হেরে যান। পরে বিএনপি ছেড়ে তিনি গঠন করেন তরিকত ফেডারেশন। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটের শরিক তরিকত ফেডারেশন থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন নজিবুল বশর।

দলীয় সূত্রের খবর, ২৭ আগস্টের ঘটনার পর ফটিকছড়ি উপজেলার নেতাদের কোন্দল নিরসনে ইতোমধ্যে দুই দফা বৈঠকের উদ্যোগ নেয় জেলা আওয়ামী লীগ। কিন্তু উপজেলা আওয়ামী লীগের বিবাদমান নেতারা কেউ বৈঠকে আসেননি। এতে চরম ক্ষুব্ধ হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ।

চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান আতা রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘ফটিকছড়ি উপজেলায় ২৭ আগস্টের ঘটনার পর আমরা দুই দফা বৈঠক ডেকেছিলাম। কিন্তু নানা অজুহাতে দুইবারই বৈঠকে আসেননি উপজেলার বিবাদমান নেতারা। আমরা এখন একটা কঠোর সিদ্ধান্তের দিকে যাবো।’

হঠাৎ করে দুপক্ষের মধ্যে আবার কেন দ্বন্দ্ব চাঙ্গা হয়ে উঠলো?- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ইন্ধন ছাড়া তো আগুন জ্বলে না। এর পেছনে দলের বাইরের তৃতীয় পক্ষের ইন্ধন রয়েছে। আমাদেরকে বিভক্ত রাখলে উনার লক্ষ্য অর্জন সহজ হয়।’

আপনি কি তৃতীয় পক্ষ বলতে স্থানীয় সংসদ সদস্যকে ইঙ্গিত করছেন?-এই প্রশ্নের উত্তরে শেখ আতাউর রহমান আতা বলেন, ‘সেটা আমি উড়িয়ে দিচ্ছি না। তবে উনাকে তো আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবো না। এ ব্যাপারে কেন্দ্রকে পদক্ষেপ নিতে হবে।’

জানতে চাইলে সংসদ সদস্য সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘এ ধরণের অভিযোগ আমাকে বিতর্কিত করার অপচেষ্টা। বরং আমি উপজেলা আওয়ামী লীগের কোন্দল নিরসনে ভূমিকা রাখছি। না হয় ফটিকছড়িতে রক্তের বন্যা বয়ে যেতো।’

তিনি বলেন, ‘অতীতে আমার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী নেতা অবস্থান নিয়েছিলেন। কিন্তু তাতে আমার কী হয়েছে? এরপরও আমি দুইবার মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছি। আমি কি করছি না করছি তা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জানেন। এখানে আমার বিরুদ্ধে কে কি বললো, না বললো তাতে আমার কিছু যায় আসে না।’

বিরোধের বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিন মুহুরী রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘ফটিকছড়িতে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডকে বিতর্কিত করার জন্য আবু তৈয়ব এসব কাজ করছেন। তার সাথে স্থানীয় সংসদ সদস্যের দহরম-মহরম সম্পর্ক রয়েছে। আজকে আমাদের দলীয় সংসদ সদস্য থাকলে এসব কোন্দল হতো না। সংসদ সদস্যের সাথে দলের নেতাদের কোনো সম্পর্ক নেই। আগামী সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়ার জন্য কেন্দ্রের কাছে আমরা জোরালো দাবি জানাবো।’

উপজেলা চেয়ারম্যান এইচ এম আবু তৈয়ব রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘উপজেলা আওয়ামী লীগ আছে নামে, তাদের কোনো কর্মকাণ্ড নেই। তারা কিছুই করবে না, আর আমরা করতে গেলে তারা বাধা হয়ে দাঁড়ায়। বঙ্গবন্ধুর শাহাদাত বার্ষিকীর কর্মসূচিতে ১৪৪ ধারা জারি হওয়ার নজির দেশের কোথাও নেই। কিন্তু এখানকার প্রশাসন সেই নজির স্থাপন করেছে।’

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ১ অক্টোবর ফটিকছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ভোটে সভাপতি পদে মুজিবুল হক চৌধুরী এবং সাধারণ সম্পাদক পদে নাজিম উদ্দিন মুহুরী নির্বাচিত হন।

সম্মেলনে নাজিম উদ্দিন মুহুরীর প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন এইচ এম আবু তৈয়ব। সম্মেলনের পর থেকে তাদের মধ্যে সাপে-নেউলে সম্পর্ক।

এই সম্মেলনের পর থেকে মূলত ফটিকছড়ি আওয়ামী লীগ দুভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। দিন দিন এই বিভক্তি চরম আকার ধারণ করে। আলাদা আলাদাভাবে সাংগঠনিক কর্মসূচিও পালন করে আসছে দুই পক্ষ। পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে এর আগেও দুপক্ষের মধ্যে বেশ কয়েকবার গোলাগুলি ও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

আরও পড়ুন: ফটিকছড়িতে নজিবুল বশরের মতো এমপি থাকলে আওয়ামী লীগে গ্রুপিং থাকবে

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর