শুক্রবার, ১৭ মে, ২০২৪ | ৩ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ | ৮ জিলকদ, ১৪৪৫

মূলপাতা আন্তর্জাতিক

তালেবান উত্থানে আফগানরাই দায়ী: বাইডেন


রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :১৭ আগস্ট, ২০২১ ১০:১৯ : পূর্বাহ্ণ
Rajnitisangbad Facebook Page

আফগানিস্তানে তালেবানের উত্থানের জন্য আফগানদেরই দায়ী করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি বলেন, ‘আমিও সেখানকার বর্তমান পরিস্থিতিতে অত্যন্ত কষ্ট পেয়েছি। তবে আমি আমার সিদ্ধান্তে অনুশোচনা অনুভব করছি না। কারণ কোনো দেশের গৃহযুদ্ধে আমাদের সৈন্য অনন্তকাল যুদ্ধ করবে না।’

যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় সোমবার হোয়াইট হাউস থেকে জাতির উদ্দেশে ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।

আফগানিস্তানে তালেবানের হাতে মার্কিন-সমর্থক সরকারের পতনের পরিপ্রেক্ষিতে তুমুল সমালোচনার মুখে জো বাইডেন তার ভাষণে বলেন, ‘প্রায় ২০ বছর আগে আমরা একটা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে আফগানিস্তানে গিয়েছিলাম। তা হচ্ছে, ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্পর যারা আমাদের ওপর হামলা করেছিল তাদেরকে ধরাশায়ী করা এবং এটা নিশ্চিত করা যেন, আল-কায়েদা আবারও আমাদের ওপর হামলা চালাতে আফগানিস্তানকে ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করতে না পারে। আমরা সে লক্ষ্যে পৌঁছেছি- এক যুগ আগেই। আফগানিস্তানের জাতীয় উন্নয়ন কখনোই আমাদের লক্ষ্য ছিল না।’

আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আফগানিস্তানের বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আমার সামনে দুটি অপশন ছিল। একটি হচ্ছে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহার আর অন্যটি হচ্ছে আরও অধিক সৈন্য মোতায়েন করা। এখন আমরা যা দেখছি, এটাই প্রমাণ করে আমেরিকান সামরিক বাহিনীর যত বড় উপস্থিতিই থাকুক আফগানিস্তানে নিরাপদ, ঐক্যবদ্ধ ও স্থিতিশীল পরিবেশ নিশ্চিত করা যেতো না। এখন যা ঘটছে তা আরও পাঁচ বছর আগে কিংবা ভবিষ্যতে আরও ১৫ বছর পরে ঘটতে পারতো।’

আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের কোন সঠিক সময় কখনোই আসবে না উল্লেখ করে জো বাইডেন বলেন, ‘যেখানে আফগান সেনারাই নিজেদের রক্ষায় লড়াই করতে চায় না, জীবন দিতে চায় না, সেখানে মার্কিন সেনারা যুদ্ধ করে মরতে পারে না। আমাদের জাতি রক্ষায় যেই সাহসী সেনা সদস্যরা জীবনের ঝুঁকি নেন তাদের দিকে তাকালে এই সিদ্ধান্তই সঠিক। আমি জানি, আফগানিস্তান নিয়ে আমার এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা হবে। কিন্তু আমি চাইলে, এই দায় এড়িয়ে পরবর্তী প্রেসিডেন্টের ওপর এই সমালোচনার বোঝা চাপাতে পারতাম।’

কাবুলের পতনের বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আশরাফ গনি (সদ্য সাবেক আফগান প্রেসিডেন্ট) নিশ্চয়তা দিয়েছিলেন, আফগান সেনারা তালেবানের বিরুদ্ধে লড়বে। কিন্তু তার এ ধারণা ভুল ছিল।’

তবে তিনি স্বীকার করেন যে, তালেবানেরা এতো দ্রুত পুরো আফগানিস্তান দখলে নেবে সেটা তার চিন্তার বাইরে ছিল।

এদিকে মার্কিন গণমাধ্যমের বিশ্লেষণে বলা হচ্ছে, যথাযথ পরিকল্পনা না করে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের তড়িঘড়ি সিদ্ধান্তের কারণে এমন ঘটনা ঘটেছে। বিশেষত কাবুল পতনের আগে-পরের চরম বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি বাইডেন প্রশাসনের জন্য বিব্রতকর হয়ে উঠেছে। তালেবানের কাবুলের দিকে ধেয়ে আসার মুখে হেলিকপ্টার দিয়ে মার্কিন দূতাবাসকর্মীদের সরিয়ে নেওয়ার দৃশ্য আমেরিকানদের আহত করেছে।

টানা ২০ বছরের আফগান যুদ্ধ থেকে যুক্তরাষ্ট্র সরে আসুক, তা বেশির ভাগ মার্কিনরাই চেয়েছেন। কিন্তু সেই সরে আসতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে যে এমন লজ্জাজনক অবস্থায় পড়তে হবে, তার জন্য কেউ প্রস্তুত ছিল না।

এদিকে পরিস্থিতির সমালোচনা করে বাইডেনের পদত্যাগ দাবি করেছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও।

রোববার এক বিবৃতিতে বাইডেনের উদ্দেশে ট্রাম্প বলেন, আফগানিস্তানে যা ঘটতে দিয়েছেন, তাতে অপমানবোধ থেকে তার (বাইডেন) পদত্যাগ করা উচিত।

২০০১ সালে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী আল কায়দা নেটওয়ার্ক নিউইয়র্কে টুইন টাওয়ারে হামলা করে। হামলার পর আল কায়দা নির্মূলে আফগানিস্তানে অভিযান শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো বাহিনী। তাদের অভিযানে ২০১১ সালের ২ মে পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে আল কায়দা নেতা ওসাবা বিন লাদেন নিহত হন। চলতি বছর এপ্রিলে আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এরপর মে থেকে আফগানিস্তান দখলে অভিযানে নামে তালেবানগোষ্ঠী এবং পুরো দেশ তাদের নিয়ন্ত্রণে নেয়।

সূত্র: রয়টার্স

মন্তব্য করুন
Rajnitisangbad Youtube


আরও খবর