নিজস্ব প্রতিবেদন প্রকাশের সময় :২১ জুলাই, ২০২১ ২:০১ : পূর্বাহ্ণ
গত বছরও করোনার মধ্যেই উদযাপিত হয়েছিল পবিত্র ঈদুল আজহা। বছর ঘুরে আবার এলো ত্যাগ ও মহিমার ঈদ। কিন্তু এক বছরের ব্যবধানে করোনা সংক্রমণ এবং মৃত্যুর চিত্র এখন ভয়াবহ। অনেক পরিবারের মাঝে নেই আনন্দ, বরং স্বজন হারানোর দুঃসহ যন্ত্রণায় আর্তনাদ করছে। তবে করোনাভাইরাসের এমন ভয়াবহ সংক্রমণের মধ্যেও পশু কোরবানিকে কেন্দ্র করে ঈদুল আজহার উৎসব তৈরি হয়েছে। ঈদ আনন্দে ভাটা পড়েনি। কারণ নাড়ির টানে বাড়ি ফিরতে কয়েকদিন ধরে দেখা গেছে গণপরিবহনে উপচে পড়া ভিড়। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পশুর হাটেও ছিল মানুষের ঢল।
ঈদুল আজহার সাথে পবিত্র হজের সম্পর্ক রয়েছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে এবার মাত্র ৬০ হাজার মুসলমানের অংশগ্রহণে হজ পালিত হচ্ছে। আজ মঙ্গলবার সৌদি আরবে ঈদুল আজহা উদযাপিত হচ্ছে। সকালে মুজদালিফা থেকে ফিরে হাজীরা মিনায় অবস্থান করে পশু কোরবানিসহ হজের অন্যান্য কার্যাদি সম্পাদন করবেন।
ঈদুল আজহা আমাদের দেশের মানুষের কাছে ‘কোরবানির ঈদ’ নামেই পরিচিত। কোরবানির পশু কেনা, তার যত্ন-পরিচর্যাতেই ঈদের মূল প্রস্তুতি ও আনন্দ।
আজ বুধবার (২১ জুলাই) সকালে দেশের মুসলিম সম্প্রদায় মহান আল্লাহ তাআলার উদ্দেশে পশু কোরবানির মধ্য দিয়ে পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপন করবেন।
হিজরি বর্ষপঞ্জি অনুসারে জিলহজ মাসের ১০ তারিখে ঈদুল আজহা পালিত হয়। ঈদুল ফিতরের মতো ঈদুল আজহায় ঠিক আগের দিনে চাঁদ দেখা নিয়ে অনিশ্চয়তা নেই। ১০ দিন আগেই ঠিক হয়ে যায় ঈদের দিনক্ষণ। সে অনুসারে পশু কেনা থেকে গ্রামের বাড়িতে ফিরে যাওয়াসহ ঈদের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে থাকেন সবাই।
কোরবানির ইতিহাস সুপ্রাচীন। হজরত আদম (আ.) থেকে হজরত মুহাম্মদ (সা.) পর্যন্ত সব নবী-রাসূল ও তাঁদের অনুসারীরা কোরবানি করেছেন। ইসলামের ইতিহাসে হজরত আদম (আ.)-এর দুই পুত্র হাবিল-কাবিলের মাধ্যমে প্রথম কোরবানির সূত্রপাত হয়। প্রায় চার হাজার বছর আগে মহান আল্লাহ’র সন্তুষ্টি লাভের জন্য হযরত ইব্রাহিম (আ.) নিজের ছেলে হযরত ইসমাইল (আ.) কে কোরবানি করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু পরম করুণাময়ের অপার কুদরতে হযরত ইসমাইল (আ.) এর পরিবর্তে একটি দুম্বার কোরবানি হয়ে যায়। হযরত ইব্রাহিম (আ.) এর সেই ত্যাগের মহিমার কথা স্মরণ করে মুসলিম সম্প্রদায় জিলহজ মাসের ১০ তারিখে আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহ লাভের জন্য পশু কোরবানি করে থাকেন।
ইসলামে কোরবানি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। পবিত্র কোরআনে সুরা কাউসারে এ ব্যাপারে বলা হয়েছে, ‘অতএব আপনার পালনকর্তার উদ্দেশে নামাজ পড়ুন এবং কোরবানি করুন।’
রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘ঈদুল আজহার দিন কোরবানির চেয়ে আর কোনো কাজ আল্লাহর কাছে অধিক পছন্দনীয় নয়। কোরবানিদাতা কিয়ামতের দিন জবেহকৃত পশুর লোম, শিং, ক্ষুর, পশম ইত্যাদি নিয়ে আল্লাহর কাছে উপস্থিত হবে। কোরবানির রক্ত জমিনে পতিত হওয়ার আগেই তা আল্লাহর কাছে বিশেষ মর্যাদায় পৌঁছে যায়। অতএব, তোমরা কোরবানির সঙ্গে নিঃসংকোচ ও প্রফুল্ল মন হও।’- (ইবনে মাজাহ, তিরমিজি)
করোনার কারণে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে মুসলমানদের উদযাপন করতে হবে পবিত্র ঈদুল আজহা। এবারও ঈদগাহে জামাত হচ্ছে না। ঈদুল ফিতরের মতো ঈদুল আজহার জামাতও মসজিদে আদায় করতে হবে মুসল্লিদের। শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে নামাজ আদায় করবেন মুসল্লিরা। ইমাম নামাজের খুতবায় তুলে ধরবেন কোরবানির তাৎপর্য। এরপর কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ধনী-গরীব নির্বিশেষে সবাই একত্রে নামাজ আদায় ও শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন।
নামাজ শেষে বাড়ি ফিরে মহান আল্লাহ তাআলার উদ্দেশ্যে পশু কোরবানি এই ঈদের প্রধান কর্তব্য। যাদের সামর্থ্য নেই তারাও বাদ যাবেন না ঈদের আনন্দ থেকে। কোরবানির মাংসের তিনভাগের এক ভাগ দরিদ্র মানুষের মধ্যে বন্টন করে দেওয়া ইসলামের বিধান। যার মধ্য দিয়ে গড়ে উঠবে সম্প্রীতি।
দেশবাসীকে পবিত্র ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা জানিয়ে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।