রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :১১ মে, ২০২১ ৫:৩৯ : অপরাহ্ণ
প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাসনামলে সামরিক আদালতে সাজাপ্রাপ্ত রাজনীতিক আ স ম আব্দুর রবকে চিকিৎসার জন্য জার্মানি পাঠানো হয়েছিল। সে সময় তিনি অবিভক্ত জাসদের অন্যতম একজন নেতা ছিলেন। এখন তিনি জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) সভাপতি।
৪২ বছর আগের সেই ঘটনা এখন নতুন করে আলোচনায় এসেছে, যখন সাজাপ্রাপ্ত সাবেক একজন প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার আবেদন নাকচ করেছে সরকার।
আবেদনটি নাকচ করার কারণ হিসেবে আওয়ামী লীগ সরকার বলেছে, খালেদা জিয়া সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় আইনে তাকে বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দেয়ার সুযোগ নেই।
অন্যদিকে বিএনপির পক্ষ থেকে উদাহরণ হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে সাজাপ্রাপ্ত হওয়ার পরও ১৯৭৯ সালে আ স ম আব্দুর রবকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর ঘটনাকে।
কিন্তু কিভাবে আ স ম আব্দুর রবকে বিদেশে পাঠানো হয়েছিল, কী ছিল সেই ঘটনা? এ নিয়ে বিবিসির সাথে কথা বলেছেন তিনি।
আ স ম আব্দুর রব বলেছেন, তার দশ বছরের সাজা বহাল থাকা অবস্থাতেই তাকে চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে পাঠানো হয়েছিল।
রবের সাজা ছিল যে মামলায়
১৯৭৫ সালের ১৫ অগাষ্ট বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার ঘটনার পর নভেম্বর মাসে সেনাবাহিনীতে অভ্যুত্থান পাল্টা-অভ্যুত্থান চলে। তখন জাসদের তৎপরতায় একটি অভ্যুত্থান হয় ৭ নভেম্বর। কিন্তু সেই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতার কেন্দ্রে চলে আসেন মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান। জেনারেল জিয়া ক্ষমতা নেয়ার পর ১৯৭৬ সালের জুলাই মাসে সামরিক আদালতে বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছিল কর্নেল আবু তাহের সহ জাসদের ১৭জন নেতাকে। এই অভিযুক্তদের মধ্যে একজন ছিলেন আ স ম আব্দুর রব।
তাদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীতে অভ্যুত্থান এবং সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়েছিল। এরপর ১৯৭৬ এর জুলাই মাসেই সামরিক আদালতের বিচারে কর্নেল তাহেরকে ফাঁসি দেয়া হয়েছিল। আর আ স ম আব্দুর রবের দশ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং জাসদের অন্য নেতাদের বিভিন্ন মেয়াদে জেল হয়েছিল।
সামরিক আদালতের রায় অনুযায়ী আ স ম আব্দুর রব জেল খাটছিলেন। তিনি কারাগারে ছিলেন ১৯৭৫ সালের নভেম্বর মাসে জিয়াউর রহমান ক্ষমতা নেয়ার পর থেকেই।
সাজা মওকুফ না করেই বিদেশ
জেল খাটার সময় ১৯৭৯ সালের এপ্রিল মাসে আ স ম আব্দুর রব অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে তখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়।
আ স ম রব জানিয়েছেন, একপর্যায়ে তার অসুস্থতা গুরুতর হয়, তখন ব্রেইন টিউমার হয়েছে, এমন আশংকা করা হয়েছিল।
তিনি বলেন, ‘অবস্থা গুরুতর হলে আমার সাজা মওকুফ না করেই আমাকে ১৯৭৯ সালের পহেলা মে চিকিৎসার জন্য তৎকালীন পশ্চিম জার্মানিতে পাঠানো হয়। তখন জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় ছিলেন। বিদেশে পাঠানোর আগে আমি আমার দাদির কবর জিয়ারত করতে চেয়েছিলাম। তখন কড়া পুলিশী পাহারায় হেলিকপ্টারে করে আমাকে আমার এলাকা লক্ষীপুরের রামগতিতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আমি দাদির কবর জিয়ারত করার পর আবার আমাকে একই হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় এনে ৭৯ এর পহেলা মে তারিখেই পশ্চিম জার্মানি পাঠানো হয়।’
আ স ম রব জানান, তার পাসপোর্ট তখন সরকার জরুরি ভিত্তিতে তৈরি করে দিয়েছিল। তাকে বিদেশে পাহারা দেয়ার জন্য একজন পুলিশ কর্মকর্তাকেও পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু পশ্চিম জার্মানির হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তার সাথে কোনো পুলিশ সদস্যকে থাকতে দিতে রাজি হয় নি। তখন জিয়া সরকার সেই পুলিশ কর্মকর্তাকে ফেরত এনেছিল।
তিনি আরও জানিয়েছেন, পশ্চিম জার্মানিতে চিকিৎসাধীন থেকেও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড করলে ছয় মাস পর বাংলাদেশ সরকার তার চিকিৎসা খরচ বন্ধ করে দিয়ে তাকে ফেরত আনার চেষ্টা করে। কিন্তু তিনি ফেরত না এসে জার্মানি প্রবাসী বাংলাদেশি ও জাসদের নেতা কর্মীদের অর্থ সহায়তায় চিকিৎসা শেষ করেন এবং এক বছর পর ১৯৮০ সালের পহেলা মে ঢাকায় ফেরেন।
আ স ম রব বলেন, ‘সাজা মাথায় নিয়ে তাকে পশ্চিম জার্মানি যেতে হয়েছিল। তবে তিনি ফেরত আসার কিছুদিন আগে তার সাথে আরও কয়েকজন জাসদ নেতার সাজা মওকুফ করেছিল জিয়া সরকার।’
সরকার কি বলছে
তবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বিবিসিকে বলেছেন, আ স ম আব্দুর রবের বিচার হয়েছিল সামরিক আদালতে।
ফলে সামরিক শাসনে সময়ের ঘটনাকে উদাহরণ হিসাবে আনা যৌক্তিক নয় বলে তিনি মন্তব্য করেন।
সূত্র: বিবিসি