সোমবার, ২০ মে, ২০২৪ | ৬ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ | ১১ জিলকদ, ১৪৪৫

মূলপাতা আইন-আদালত

বাঁশখালী বিদ্যুৎকেন্দ্রে পুলিশের গুলিতে ৫ শ্রমিক নিহত: বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়ে রিট


নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা প্রকাশের সময় :২২ এপ্রিল, ২০২১ ২:০০ : অপরাহ্ণ
Rajnitisangbad Facebook Page

চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে সংঘর্ষে পুলিশের গুলিতে পাঁচ শ্রমিক নিহতের ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়েছে। রিটে গুলিতে নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে তিন কোটি এবং আহতদের দুই কোটি টাকা করে ক্ষতিপূরণ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২২ এপ্রিল) মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) পক্ষে অ্যাডভোকেট সৈয়দা নাসরিন এ রিট দায়ের করেন।

অ্যাডভোকেট সৈয়দা নাসরিন জানান, আগামী সপ্তাহে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চে রিট আবেদনটির ওপর শুনানি হতে পারে।

এর আগে গত ১৮ এপ্রিল শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ৫ জন নিহতের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়।

নোটিশে বলা হয়েছিল, গত ১৭ এপ্রিল চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রে সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের গুলিতে পাঁচ শ্রমিক গুলিতে নিহত হন। একইসঙ্গে ২০ জন শ্রমিক আহত হন। বেতনভাতা নিয়ে অসন্তোষ থেকে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। আহত বেশ কয়েকজনকে বাঁশখালী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

নোটিশে পুলিশের গুলিতে নিহত প্রত্যেক পরিবারকে তিন কোটি টাকা ও আহত প্রত্যেকের পরিবারকে দুই কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে অনুরোধ জানানো হয়েছিল।এছাড়া নিহত ও আহত শ্রমিকের পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে নোটিশে।

মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সৈয়দা নাসরিন এ নোটিশ পাঠান। স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব, শিল্প সচিব, বাণিজ্য সচিব, পুলিশ মহাপরিদর্শকসহ সংশ্লিষ্টদের এ নোটিশ পাঠানো হয়।

কিন্তু সে নোটিশের জবাব না পেয়ে প্রতিকার চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হলো।

গত ১৭ এপ্রিল চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার গণ্ডামারা ইউনিয়নে নির্মাণাধীন ১৩২০ মেগাওয়াটের ‘এসএস পাওয়ার প্ল্যান্টে’ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে পুলিশের গুলিতে পাঁচ শ্রমিক মারা যান। গতকাল বুধবার (২১ এপ্রিল) রাতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (চমেক) চিকিৎসাধীন গুলিবিদ্ধ শিমুল নামে আরও এক যুবকের মৃত্যু হয়। এ নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের গুলিতে ৬ জনের মৃত্যু হলো। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন ১৭ জন শ্রমিক।

ঘটনার পর হাসপাতালে আহত শ্রমিকরা অভিযোগ করেন, তাদের বেশ কয়েক মাস ধরে নিয়মিত বেতন দেয়া হচ্ছিল না। সেই সঙ্গে তারা বেতন বাড়ানোর দাবি জানিয়ে আসছিলেন। রমজানে ইফতারের সময় না দেয়ার অভিযোগও করেন তারা। নামাজ, ইফতার ও রোজার ছুটি দেওয়ার দাবি জানিয়েছিলেন তারা, তাও মানা হচ্ছিল না। এছাড়াও শ্রমিকদের অভিযোগ, সেখানে পানি ও টয়লেটের সংকট রয়েছে। আট ঘণ্টার পরিবর্তে ১০ ঘণ্টা কাজে বাধ্য করা হয়। তাদের সাথে সবসময় খারাপ ব্যবহার করা হয়। এনিয়ে তারা ১১ দফা লিখিত দাবি দিয়েছিল। শুক্রবারও তাদের কাজ করতে হয়। এ নিয়ে শুক্রবার তারা বিক্ষোভ করেন। শনিবার সকালে তারা আবার বিক্ষোভ করলে তা দমনে গুলি চালানো হয়।

শ্রমিকরা অভিযোগ করেছেন, মালিকপক্ষ তাদের ন্যায্য আন্দোলন দমনে পুলিশকে ব্যবহার করেছেন।

চীনের সাথে যৌথ উদ্যোগে দেশের বৃহৎ শিল্প গ্রুপ এস আলমের কয়লাভিত্তিক এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি স্থাপনের প্রাথমিক কাজ শুরু হয় প্রায় আট বছর আগে। ২০১৬ সালের ৪ এপ্রিল এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের রিরোধিতা করে স্থানীয়রা আন্দোলন করেন। তখন গুলিতে চারজন নিহত হন। কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কারণে স্থানীয়রা শুরু থেকেই পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা প্রকাশ করে এর বিরোধিতা করে আসছেন।

এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ৪০ হাজার কোটি টাকা। ২০২২ সাল নাগাদ কেন্দ্রটি উৎপাদনে যাওয়ার কথা।

আরও পড়ুন:

বাঁশখালীতে বেতনের দাবিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভ, পুলিশের গুলিতে নিহত ৫

আরও পড়ুন:

https://rajnitisangbad.com/2021/04/17/%e0%a6%8f%e0%a6%b8-%e0%a6%86%e0%a6%b2%e0%a6%ae%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%b8%e0%a6%99%e0%a7%8d%e0%a6%97%e0%a7%87-%e0%a6%b8%e0%a6%b0%e0%a6%95%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%9a%e0%a7%81/

মন্তব্য করুন
Rajnitisangbad Youtube


আরও খবর