রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশের সময় :১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ৭:৫৩ : অপরাহ্ণ
চট্টগ্রাম নগরীর সরকারী হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজে ছাত্রলীগের একাংশের নেতাকর্মীদের নিয়ে ‘শোডাউন’ করেছেন সন্ত্রাসী গাজী জাফর উল্লাহ। মঙ্গলবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) রাত ১০টার দিকে নেতাকর্মীর বহর নিয়ে তিনি মহসিন কলেজের অধ্যক্ষের কক্ষে যান। সেখানে কলেজের শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক নজরুল ইসলাম তাদের পিঠা দিয়ে আপ্যায়ন করেন। একজন সন্ত্রাসীর সাথে কলেজ কর্তৃপক্ষের এমন সাক্ষাতে মহসিন কলেজ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
গাজী জাফর উল্লাহর সাথে নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি, নগর ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য শিবু প্রসাদ চৌধুরী, চট্টগ্রাম কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদুল করিম ও মহসিন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আনোয়ার পলাশসহ শতাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
সিআরবিতে জোড়া খুনের মামলার অভিযোগপত্রে ৬৪ নম্বর আসামি হেলাল আকবর চৌধুরী বাবরের সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে পরিচিত গাজী জাফর উল্লাহ। ২০১৬ সালের ১৯ জুন চট্টগ্রাম কলেজ সড়কে ছাত্রলীগের দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ চলাকালে গোলাগুলিতে নেতৃত্ব দেন সন্ত্রাসী জাফর উল্লাহ। সেদিন তার নির্দেশে প্রকাশ্যে পিস্তল নিয়ে গুলি ছুঁড়তে দেখা গেছে জাফরের সহযোগী দেলোয়ারকে। ওই সংঘর্ষের ঘটনায় জাফর উল্লাহকে প্রধান আসামি করে চকবাজার থানায় মামলা করেছিলেন চট্টগ্রাম কলেজের আনোয়ার হোসেন নামের এক ছাত্রলীগ নেতা।
পুলিশ সূত্র জানায়, জাফর উল্লাহ ১৯৯৬ সালে আজাদ আলী খান হত্যা মামলার আসামি ছিলেন। এছাড়া তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও অপহরণের একাধিক মামলা রয়েছে।
মহসিন কলেজ ছাত্রলীগের একাংশের নেতারা মনে করছেন, মহসিন কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি নিয়ে অসন্তুষ্ট নেতারা ক্যাম্পাসে প্রতিপক্ষকে তাদের প্রভাব প্রতিপত্তি দেখাতে গাজী জাফরের নেতৃত্বে এই ‘শোডাউন’ দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, মহসিন কলেজ ছাত্রলীগের কমিটিতে আহ্বায়ক প্রত্যাশী ছিলেন আনোয়ার পলাশ। কিন্তু গত ১০ ফেব্রুয়ারি ঘোষিত কমিটিতে তাকে যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়। আনোয়ার পলাশ যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক উপ অর্থ সম্পাদক হেলাল আকবর চৌধুরী বাবরের অনুসারী।
মহসিন কলেজ প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গাজী জাফর উল্লাহ নেতাকর্মীর বহর নিয়ে অধ্যক্ষের কক্ষে প্রবেশ করলে মহসিন কলেজ শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক নজরুল ইসলাম তাদের সাথে কুশলবিনিময় করেন। তখন কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন না। গাজী জাফর উল্লাহসহ নেতাকর্মীদের পিঠা দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়। নজরুল ইসলামের সাথে জাফর উল্লাহ হাস্যোজ্জ্বল ভঙ্গিতে আলাপচারিতা করেন। জাফর উল্লাহর পাশে বসা ছিলেন নুরুল আজিম রনি। তারা প্রায় ১০ মিনিট আলাপচারিতা করেন।
মহসিন কলেজের শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক নজরুল ইসলামের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি পরস্পরবিরোধী মন্তব্য করেন। রাজনীতি সংবাদকে তিনি প্রথমে বলেন, ‘তখন আমরা অফিস থেকে বের হচ্ছিলাম। তখন তারা হুট করে এসে কক্ষে ঢুকে পড়েন। আমরা অনুষ্ঠানে বহিরাগত রাজনৈতিক কোনো নেতাকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
অনুমতি ছাড়া অফিসে কি বাইরের যে কোনো লোক প্রবেশ করতে পারে?-এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘এখানে একটা অনুষ্ঠান ছিল। তারা অধ্যক্ষ স্যার ছিল কিনা তা দেখতে এসেছিলেন। এরপর না পেয়ে চলে গেছেন।’
কিন্তু তাদেরকে তো অফিসে পিঠা দিয়ে আপ্যায়ন করা হলো ? এ প্রশ্নের জবাবে নজরুল ইসলাম সুর পাল্টে বলেন, ‘তাদের (ছাত্রলীগ নেতাকর্মী) সাথে দেখা করার জন্য আমাকে বাধ্যতামূলকভাবে থাকতে হয়েছে। বাস্তবতা তো আপনারা বুঝেন।’
গাজী জাফর উল্লাহ রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘আমরা কলেজের একটা অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। স্যারেরা ডেকেছিলেন পিঠা খাওয়ার জন্য। পিঠা খেয়ে সামনাসামনি কথা বলে চলে এসেছি।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘হুট করে অধ্যক্ষের কক্ষে কি ঢুকা যায়? স্যারদের সাথে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক আছে, তাই গিয়েছি। স্যার বললেন নাস্তা খান, আমি বললাম খাবো না। তারপরও জোর করে নাস্তা খাওয়ালেন। স্যারেরা সবাই ছিলেন। এখানে রাজনৈতিক কোনো আলাপচারিতা হয়নি। স্যারেরা কলেজের উন্নয়ন ও শিক্ষার পরিবেশ নিয়ে আমার সাথে কথা বলেছেন।’
শিক্ষকদের সাথে আপনার কি সম্পর্ক?-এ প্রশ্নের জবাবে গাজী জাফর উল্লাহ বলেন, ‘২০১৫ সালে কলেজটা যখন ছাত্রলীগের ছেলেরা দখল করেছিল তখন আমি তাদের পাশে ছিলাম। তখন থেকে কলেজের স্যারদের সাথে আমার সম্পর্ক আছে।’
মহসিন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আনোয়ার পলাশ রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘গতকাল (মঙ্গলবার) কলেজে একটি অনুষ্ঠান ছিল। সে অনুষ্ঠানে আমরা বাবর ভাই, জাফর ভাই, রনি ভাই ও শিবু ভাইকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। তারা ক্যাম্পাসে আসলে স্যারেরা তাদের ডেকে নিয়ে পিঠা দিয়ে আপ্যায়ন করেছেন।’
প্রশ্নর জবাবে আনোয়ার পলাশ বলেন, ‘শাব্দিক অর্থে তারা বহিরাগত নয়। তারাই তো চট্টগ্রাম কলেজ ও মহসিন কলেজকে জামায়াত-শিবির মুক্ত করেছিলেন। তারা তো এক প্রকার কলেজ দুটির অভিভাবক। আর ছাত্রলীগের কমিটি গঠনের সাথে তাদের ক্যাম্পাসে আসার কোনো সম্পর্ক আছে বলে মনে করি না।’
ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের প্রবেশ নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন মহসিন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের দুই পক্ষের নেতারা।
মহসিন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কাজী নাঈম প্রশ্ন রাখেন, ‘কলেজ কর্তৃপক্ষ ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছেন। কিন্তু এরপরও বহিরাগতরা ক্যাম্পাসে কীভাবে আসলেন? বহিরাগতদের কারণে ক্যাম্পাসে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হোক সেটা আমরা চাই না।’
মহসিন কলেজ ছাত্রলীগের পাল্টা কমিটির সভাপতি বোরহান উদ্দিন রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘বহিরাগত বিতর্কিত ব্যক্তিদের সাথে কলেজের স্যারেরা সাক্ষাত করে অন্যায় করেছেন। স্যারদের উচিত ছিল তাদের এড়িয়ে যাওয়া। কিন্তু তারা সেটা করেননি। এতে স্যারদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।’