রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশের সময় :১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ৭:০০ : অপরাহ্ণ
ছাত্রলীগ চট্টগ্রাম মহানগর শাখার একাংশের নেতাকর্মীরা তৃণমূলে পৃথক বলয় গড়ে তুলছেন। নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের সমর্থক ছাত্রলীগের এসব নেতারা পাল্টা ইউনিট কমিটি গঠনের মাধ্যমে তৃণমূলে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছেন। এতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন নগর ছাত্রলীগের মূলধারার নেতারা।
গত ১০ ফেব্রুয়ারি নগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু ও সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর ১৩টি ইউনিটের কমিটি ঘোষণা করেন। এগুলো হলো-হাজী মুহাম্মদ মহসীন কলেজ, বাকলিয়া থানা, চকবাজার থানা, হালিশহর থানা, বায়েজিদ থানা, পাঁচলাইশ থানা. পাহাড়তলী থানা, ১৭ নম্বর পশ্চিম বাকলিয়া ওয়ার্ড, ১৯ নম্বর দক্ষিণ বাকলিয়া ওয়ার্ড, ১৬ নম্বর চকবাজার ওয়ার্ড, ১১ নম্বর দক্ষিণ কাট্টলী ওয়ার্ড, ১২ নম্বর সরাই পাড়া ওয়ার্ড এবং ২৫ নম্বর রামপুর ওয়ার্ড। এর আগে তারা ৮টি ইউনিটের কমিটি ঘোষণা করেন। এগুলো হলো-চট্টগ্রাম কলেজ, চান্দগাঁও থানা, ডবলমুরিং থানা, আকবরশাহ থানা, বন্দর থানা, পতেঙ্গা থানা এবং ১০ নম্বর উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ড ও ১৮ নম্বর পূর্ব বাকলিয়া ওয়ার্ড।
নগর ছাত্রলীগের একটা অংশের নেতারা (আ জ ম নাছিরের সমর্থক) ইমু-দস্তগীরের সম্প্রতি ঘোষিত কমিটিতে তাদের কর্মীদের অবমূল্যায়ন ও পদ না দেওয়ার কারণে অসন্তুষ্ট হয়ে ৮ ইউনিটে পাল্টা কমিটি ঘোষণা করেন। এগুলো হলো- হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ, বাকলিয়া থানা, পাহাড়তলী থানা, হালিশহর থানা ও বায়েজিদ থানা এবং ৫ নম্বর মোহরা ওয়ার্ড , ১৭ নম্বর পশ্চিম বাকলিয়া ওয়ার্ড এবং ২১ নম্বর জামাল খান ওয়ার্ড। এর আগে তারা ১ নম্বর দক্ষিণ পাহাড়তলী, ২ নম্বর জালালাবাদ এবং ২৩ নম্বর পাঠানটুলী ওয়ার্ডেও পাল্টা কমিটি দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, নগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু ও সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগ: নাছির সমর্থকদের আরও ৩ ওয়ার্ডে পাল্টা কমিটি
২০১৩ সাল থেকে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের দ্বিধাবিভক্তি কেবল মহানগর কমিটির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু দুই পক্ষের বিরোধ এখন ছড়িয়ে পড়েছে কলেজ, থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ে। নিজেদের আধিপত্য আর ক্ষমতা ধরে রাখতে তৃণমূলে আ জ ম নাছিরের সমর্থক ছাত্রলীগের নেতারা পৃথক বলয় গড়ে তুলছেন। মূলধারার নেতাদের চ্যালেঞ্জ করে পাল্টা ইউনিট কমিটি গঠনের মাধ্যমে তারা নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছেন।
নগরীর হালিশহর, বাকলিয়া ও ৫ নম্বর মোহরা ওয়ার্ডে পাল্টা কমিটি ঘোষণার পর শোডাউন করেছে কমিটির নেতা ও তাদের সমর্থকরা। তবে ইমু-দস্তগীর ঘোষিত কমিটির নেতারা কোনো শোডাউন করেনি।
নগর ছাত্রলীগের একাংশের যুগ্ম সম্পাদক মুঈনুর রহমান রাজনীতি সংবাদকে বলেন, আমাদের পাল্টা কমিটির উদ্দেশ্য হলো রাজপথ দখলে রাখা। প্রতিপক্ষকে আমরা কোনো অবস্থাতে বিনা চ্যালেঞ্জে ছেড়ে দিবো না।
পাল্টা কমিটিতে স্বাক্ষর করা নগর ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক ওয়াহেদ রাসেল রাজনীতি সংবাদকে বলেন, আমরা ইতোমধ্যে যেসব ইউনিট কমিটি ঘোষণা করেছি সেখানে আমাদের নেতাকর্মীরা শোডাউন করে অস্তিত্বের বিষয়টি জানান দিয়েছেন। কিন্তু প্রতিপক্ষের নেতাকর্মীরা কমিটি করে এলাকায় এখনও একটা মিছিলও করতে পারেনি। তার মানে এলাকায় তাদের কোনো অবস্থান নেই।
প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তৃণমূল কর্মীদের মূল্যায়ন করতে আমরা পাল্টা কমিটি ঘোষণা করেছি। সব ইউনিটে ধাপে ধাপে পাল্টা কমিটি ঘোষণা করবো।
শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের সমর্থক নগর ছাত্রলীগের সম্পাদক মন্ডলীর একজন নেতা পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে রাজনীতি সংবাদকে বলেন, নগরীর সবকটি ইউনিটে যদি পাল্টা কমিটি হয় তাহলে সেটা আমাদের জন্য সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের মতো তৃণমূলে তাদের সাংগঠনিকভাবে একটা নিজস্ব বলয় সৃষ্টি হবে। তারা হয়তো পরিকল্পিতভাবে তৃণমূলে শক্তিশালী ভিত্তি গড়ে তুলতে পাল্টা কমিটি দিচ্ছে।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে (চমেক) দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে একক আধিপত্য বিস্তার করছেন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের সমর্থক ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। চমেক শাখা ছাত্রলীগ সম্মেলনের মাধ্যমে নিজেরাই নেতৃত্ব নির্বাচন করেন। ছাত্রলীগের কেন্দ্রের সাথে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল চমেক হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর সেখানে তার সমর্থক ছাত্রলীগের কর্মীরা আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করছেন।
নগর ছাত্রলীগের একটা অংশের পাল্টা কমিটি ঘোষণা প্রসঙ্গে নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর গত ১২ ফেব্রুয়ারি রাজনীতি সংবাদকে বলেছিলেন, ‘ওই অংশের (নাছির সমর্থক) কর্মীদেরকেও আমরা কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে রেখেছি। কিন্তু এরপরও তারা সন্তুষ্ট নয়। তারা পাল্টা কমিটি দেওয়ার এখতিয়ার রাখে না। পাল্টা কমিটি দিতে পারে সভাপতি কিংবা সেক্রেটারি। তারা পাল্টা কমিটি দিয়ে শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন।’
ইমু-দস্তগীর স্বাক্ষরিত হাজী মুহাম্মদ মহসীন কলেজ শাখা কমিটির আহ্বায়ক কাজী নাঈম রাজনীতি সংবাদকে বলেন, পাল্টা কমিটির নেতাদের কলেজের অধ্যক্ষ ক্যাম্পাসে অবৈধ ঘোষণা করেছেন। কাজেই ক্যাম্পাসে তারা সাংগঠনিক কোনো কার্যক্রম চালাতে পারবে না। আর করলেও সেটা কেন্দ্র দেখবে।
ইমু-দস্তগীর স্বাক্ষরিত হালিশহর থানা শাখা কমিটির আহ্বায়ক আবদুর রহিম জিসান রাজনীতি সংবাদকে বলেন, পাল্টা কমিটির নেতারা শোডাউন করলেও তারা শেষ পর্যন্ত মূল ধারার কমিটিকে মেনে নিবে।
দলীয় সূত্রের খবর, আ জ ম নাছির উদ্দীন মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর তার অনুসারী ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাকে ঘটা করে সংবর্ধনা দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তখন নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এতে সায় দেননি। ২০১৩ সালের ৩০ অক্টোবর মহানগর কমিটি হওয়ার পর ছাত্রলীগের নেতাদের মধ্যে এ ঘটনার সূত্র ধরে প্রথমবারের মতো দৃশ্যমান অভ্যন্তরীণ বিরোধ সৃষ্টি হয়। এরপর থেকে দুই পক্ষের মধ্যে দূরত্ব বাড়তে থাকে। প্রায় পাঁচ বছর ধরে পৃথকভাবে কর্মসূচি পালন করতে থাকে দুই পক্ষের নেতাকর্মীরা।
তিন বছর আগে ২০১৮ সালের ২৭ মে নগরীর জামাল খান রীমা কনভেনশন সেন্টারে নগর ছাত্রলীগের দুই পক্ষের বিরোধের আগুন নিভে গিয়েছিল। সেই আগুন নিভিয়েছিলেন নগর ছাত্রলীগের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর। তিনি আ জ ম নাছিরের সমর্থক ছাত্রলীগ নেতাদের কাছে টেনে নিয়ে একসাথে ইফতার মাহফিল করেন। কিন্তু এরপর বিভিন্ন ইস্যুতে দুই পক্ষের মধ্যে আবার দূরত্ব সৃষ্টি হয়।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগ: ইমু-দস্তগীরকে চ্যালেঞ্জ করে নাছির সমর্থকদের আরও ২ থানায় পাল্টা কমিটি
আরও পড়ুন: বাকলিয়া, পাহাড়তলী থানা ও মহসিন কলেজে ছাত্রলীগের পাল্টা কমিটি