রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশের সময় :২৭ জানুয়ারি, ২০২১ ৮:৪৫ : পূর্বাহ্ণ
আতঙ্ক ও উত্তেজনার মধ্যে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) ভোটের লড়াই চলছে। ভোটের আগের রাতে (মঙ্গলবার) নগরীর দেওয়ানবাজার এলাকায় পুলিশের সাথে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ এবং বাকলিয়া মিয়াখান নগর এলাকায় গোলাগুলি ও ককটেল বিষ্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। তবে আজ (২৭ জানুয়ারি) বুধবার সকাল আটটায় ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার পর এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত অপ্রীতিকর কোনো ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। বিরতিহীনভাবে ভোট চলবে বিকাল চারটা পর্যন্ত। এই সময়ের মধ্যে ৭৩৫টি কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) প্রায় ২০ লাখ ভোটার ভোট দেবেন।
সিটির নতুন ‘অভিভাবক’ নির্বাচন করতে সকাল থেকে শীত উপেক্ষা করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে মাস্ক পরে ভোট দিতে আসছেন ভোটাররা। নগরীর কোনো কোনো ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের দীর্ঘলাইন দেখা গেছে। তবে অনেক কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি কম দেখা গেছে।
বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থীদের কারণে ভোটের দিনে সন্ত্রাসের আশঙ্কায় ভুগছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা। অন্যদিকে ভোটকেন্দ্র দখলের আশঙ্কা করছে বিএনপি। নির্বাচনে সহিংসতার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। তিনি বলেছেন, এই নির্বাচনকে ঘিরে সহিংসতার শঙ্কা ও উদ্বেগের যথেষ্ট কারণ রয়েছে।
গত ১২ জানুয়ারি ২৮ নম্বর পাঠানটুলী ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ কাউন্সিলর প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাহাদুরের গণসংযোগে গুলি বর্ষণ করে বিদ্রোহী প্রার্থী আবদুল কাদেরের সমর্থকরা। এতে আজগর আলী বাবুল (৫৫) নামে এক আওয়ামী লীগ কর্মী মারা যান। এ হত্যাকান্ডের পর নির্বাচনী মাঠ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এছাড়া গত ১৬ জানুয়ারি ১৪ নম্বর লালখান বাজার ওয়ার্ডে নৌকার মেয়র প্রার্থীর গণসংযোগে আওয়ামী লীগ কাউন্সিলর প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে উভয়পক্ষের ১৫ জন সমর্থক আহত হন। একই দিন নগরীর ২৫ নম্বর রামপুর ওয়ার্ডে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেনের গাড়িবহরে ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটে। এসব ঘটনার পর ভোটের মাঠে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান বলেছেন, সুষ্ঠু, প্রতিযোগিতামূলক ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে সাধারণ ওয়ার্ড ৪১টি ও সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ড ১৪টি। চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয়ের তথ্যমতে, নগরীতে ভোটার সংখ্যা ১৯ লাখ ৩৮ হাজার ৭০৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৯ লাখ ৯২ হাজার ২৬ জন এবং নারী ভোটার ৯ লাখ ৪৬ হাজার ৬৭৮ জন।
এবার মেয়র পদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হওয়ায় বাড়তি আগ্রহ সবারই। এবারও কী বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী জিতছে না কি, তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী জিতবে—এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে আজই।
মেয়র পদে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ ৬ দলের ৬ প্রার্থী ভোটযুদ্ধে অংশ নিচ্ছেন। এরা হলেন-আওয়ামী লীগের (নৌকা) এম. রেজাউল করিম চৌধুরী, বিএনপির (ধানের শীষ) ডা. শাহাদাত হোসেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের (হাতপাখা) মো. জান্নাতুল ইসলাম, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের (মোমবাতি) এম এ মতিন, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের (চেয়ার) মুহাম্মদ ওয়াহেদ মুরাদ এবং ন্যাশনাল পিপলস্ পার্টির (আম) আবুল মনজুর।
মেয়র পদে ছয় জন প্রতিদ্বন্দ্বীতায় থাকলেও আওয়ামী লীগ-বিএনপি প্রার্থীর মধ্য থেকেই চট্টগ্রাম সিটির অভিভাবক নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন-এমনটি মনে করছেন সাধারণ ভোটারসহ সংশ্লিষ্টরা।
সিটি করপোরেশনের ৪১টি ওয়ার্ডের মধ্যে কাউন্সিলর পদে ভোট হচ্ছে ৩৯টিতে। ৩১ নম্বর আলকরণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী পদে ভোট স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন। কাউন্সিলর প্রার্থী তারেক সোলেমান সেলিমের মৃত্যুতে গত ২১ জানুয়ারি এই ওয়ার্ডে শুধুমাত্র কাউন্সিলর পদে ভোট স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন। এছাড়া ১৮ নম্বর পূর্ব বাকলিয়া ওয়ার্ডে ভোটের আগে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী হারুন উর রশিদ।
চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয়ের তথ্যমতে, ৩১ নম্বর আলকরণ ও ১৮ নম্বর পূর্ব বাকলিয়া ওয়ার্ড ছাড়া বাকি ৩৯টি সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী রয়েছে ১৬৮ জন। আর ১৪টি সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডে প্রার্থী রয়েছে ৫৭ জন।
৩৯টি সাধারণ ওয়ার্ড ও ১৪টি সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের মনোনীত ও বিদ্রোহী মিলে ৮৮ জন প্রার্থী রয়েছেন। ৩১টি সাধারণ ওয়ার্ডে ৬১ জন এবং ১২টি সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডে ১৭ জন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। বাকি ৮টি সাধারণ ওয়ার্ড ও দুটি সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী রয়েছে। বিএনপির মাত্র একটি সাধারণ ওয়ার্ড ও দুটি সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডে বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ৭৩৫টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৪১০টি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কার কারণে নির্বাচনী সহিংসতা এড়াতে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে নির্বাচন কমিশন। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবেলায় নগরীতে গত রোববার থেকে ২৫ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। আজ ভোটের দিন মাঠে রয়েছেন ২০ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট। ৭৩৫টি কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করছেন ৮ হাজার পুলিশ সদস্য। এর মধ্যে প্রতিটি কেন্দ্রে ৬ জন পুলিশ ও ১২ জন আনসার দায়িত্ব পালন করছেন।