রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশের সময় :১২ নভেম্বর, ২০২০ ৭:০৮ : অপরাহ্ণ
নগর যুবলীগের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চুর বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছেন সংগঠনের চার যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকা, ফরিদ মাহমুদ, দিদারুল আলম ও মাহবুবুল হক সুমন। বাচ্চুর বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ এনে একজোট হয়েছেন তারা।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গত এক বছর ধরে নগর যুবলীগের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চুর সাথে তলে তলে বিরোধ চলে আসছিল চার যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকা, ফরিদ মাহমুদ, দিদারুল আলম ও মাহবুবুল হক সুমনের। বাচ্চুর বিরুদ্ধে তাদের অভিযোগ, তিনি গত এক বছর ধরে কমিটির চার যুগ্ম আহ্বায়কের মতামত না নিয়ে নিজের একক সিদ্ধান্তে বিভিন্ন সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছেন।
দলীয় সূত্র জানায়, ২ মার্চ যুবলীগের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি সভায় নগর কমিটির কাউন্সিলর নির্বাচন নিয়ে নগর যুবলীগের আহ্বায়কের সাথে চার যুগ্ম আহ্বায়কের বিরোধের সূত্রপাত হয়।
চার যুগ্ম আহ্বায়কের অভিযোগ, যুবলীগের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি সভায় বাচ্চু তৃণমূল নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে তার পছন্দের নেতাকর্মীদের কাউন্সিলর কার্ড দেন। এরপর কেন্দ্রীয় কমিটিতে তিনি চার যুগ্ম আহ্বায়ককে না জানিয়ে গোপনে তার পছন্দের কর্মীদের নামের তালিকা কেন্দ্রে জমা দেন। পরবর্তীতে গত ১৫ আগস্ট বাচ্চু নগরীর ৬টি ওয়ার্ডে তাদের না জানিয়ে এককভাবে শোক দিবসের কর্মসূচি পালন করেন।
বাচ্চুর এসব ‘অসাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের’ কারণে তার সাথে দূরত্ব তৈরি হয় বলে জানিয়েছেন চার যুগ্ম আহ্বায়ক।
চার যুগ্ম আহ্বায়ক বাচ্চুর বিরুদ্ধে অসাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ তুললেও এ বিষয়ে অবগত নন মহিউদ্দিন বাচ্চু। রাজনীতি সংবাদকে তিনি বলেন, ‘তারা কী কারণে আমার থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলছেন তা আমি জানি না। তারা আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন নেতাদের কাছে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ করছেন। কিন্তু আমি কী স্বেচ্ছাচারিতা করলাম সেটা তাদের স্পষ্ট করে বলা উচিত।’
দলীয় সূত্রের খবর, বাচ্চুর সাথে বিরোধের জের ধরে নগর যুবলীগের চার যুগ্ম আহ্বায়ক গত ২১ সেপ্টেম্বর সাবেক মন্ত্রী ও নগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি এম এ মান্নানের মৃত্যুবার্ষিকী ও ২২ সেপ্টেম্বর নগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী ইনামুল হক দানুর মৃত্যুবার্ষিকীতে তাদের কবরে পৃথকভাবে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
এরপর চার যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকা, ফরিদ মাহমুদ, দিদারুল আলম ও মাহবুবুল হক সুমন একজোট হয়ে যান।
এ চার নেতা গত ২৮ সেপ্টেম্বর নগর যুবলীগের ব্যানারে প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিনের কর্মসূচি পৃথকভাবে পালন করে জানান দেন তারা জোটবদ্ধ হয়েছেন!
এরপর তারা একজোট হয়ে গত ৩ নভেম্বর জেল হত্যা দিবস, ১০ নভেম্বর শহীদ নূর হোসেন দিবস এবং সর্বশেষ ১১ নভেম্বর যুবলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি পৃথকভাবে পালন করেন।
নগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকা রাজনীতি সংবাদকে বলেন, আহ্বায়ক আমাদের কোনো মতামত ছাড়া তার ইচ্ছামতো সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন। তিনি স্বেচ্ছাচারিতা করছেন। তাই আমরা পৃথকভাবে কর্মসূচি পালন করছি।
নগর যুবলীগের অপর যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদ মাহমুদ বলেন, ‘আহ্বায়ক অত্যন্ত সুকৌশলে নিজের ব্যক্তি স্বার্থে সংগঠনকে ব্যবহার করছেন। তিনি সন্ত্রাসীদের নিয়ে সাংগঠনিক কর্মসূচি পালন করছেন।
চার যুগ্ম আহ্বায়ক জোট বাঁধলেও একলা চলো নীতিতে পথ চলছেন আহ্বায়ক!
মহিউদ্দিন বাচ্চু রাজনীতি সংবাদকে বলেন, যুবলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সভাপতি কিংবা আহ্বায়কের সিদ্ধান্ত ছাড়া সংগঠনের অন্য কোনো নেতা কোনো কর্মসূচির উদ্যোগ নিতে পারেন না। চার যুগ্ম আহ্বায়ক গঠনতন্ত্র পরিপন্থী কাজ করছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকা বলেন, ‘গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তো যুগ্ম আহ্বায়কদের মতামত ছাড়া আহ্বায়ক এককভাবে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের বিষয়ে একক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। গঠনতন্ত্র পরিপন্থী কাজ আগে তিনি শুরু করেছেন।’
উল্লেখ্য, নগর যুবলীগের ১০১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন হয়েছিল ২০১৩ সালের ১১ জুলাই। তিন মাস মেয়াদী এ কমিটির এখন বয়স চলছে ৭ বছর।